রবীন্দ্রজয়ন্তী ২৩ শে বৈশাখ? মোদি সরকারের ক্যালেন্ডারে বিতর্ক
রবি ঠাকুরের জন্মস্থান ভুল করেছিল আগেই। এবার জন্মজয়ন্তীর তারিখও বদলে দিল মোদি সরকারের ক্যালেন্ডার! এ বছর কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী পঁচিশে বৈশাখ নয়, তেইশে বৈশাখ! ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই বেজায় ক্ষুব্ধ রবীন্দ্র অনুরাগী থকে শুরু করে আম-বাঙালি। ভোটমুখী বাংলার রাজনীতিতেও সঙ্গত কারণেই এসে পড়েছে এই ‘ক্যালেন্ডার-বিভ্রাট’। মোদি-অমিত-নাড্ডাদের আক্রমণে বিজেপি বিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দল বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে গেল বলেও মনে করা হচ্ছে।
ভোট রাজনীতিতে বাঙালির আবেগ উস্কে দিতে বাংলার মনীষীদের রাতদিন স্মরণ করছে গেরুয়া শিবির। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর বাণী না আউড়ে বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছেন না প্রধানমন্ত্রী। রবীন্দ্র-আবেগে ভাসছেন তাঁর অন্যতম সেনাপতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। রাজ্যে এসে বারবার রবি ঠাকুরের নামগান করছেন তিনি। আর তা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে বিতর্কে জড়াচ্ছেন বিজেপি’র একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। সম্প্রতি বিজেপির বেঙ্গল ইউনিটের অফিসিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেলে লেখা হয়—‘বিশ্বভারতী কবিগুরুর জন্মস্থান’। তা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘রবি ঠাকুরের জন্ম কোথায় হয়েছিল এঁরা জানেন না! বাংলার মনীষীদের এঁরা অপমান করছেন।’
বিশ্বকবির জন্মস্থানকে ঘিরে এই অনভিপ্রেত বিতর্কের মাঝেই তাঁর জন্মজয়ন্তী নিয়ে নতুন করে গোল বাঁধিয়ে দিল মোদি সরকারের ক্যালেন্ডার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত ডিজিটাল ক্যালেন্ডারে বলা হয়েছে, এ বছর রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হবে ২৩ বৈশাখ! আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়। ওই ক্যালেন্ডার আরও জানাচ্ছে, এবার চৈত্র সংক্রান্তির পরের দিন ‘মেসাদি’ নামে একটি দিবস উদযাপন করা হবে। ওই দিন আসলে তামিল নববর্ষ। কিন্তু সেদিন যে বাংলারও নববর্ষ, সেই তথ্যের কোনও উল্লেখ নেই কেন্দ্রীয় সরকারের ক্যালেন্ডারে। বাংলার সংস্কৃতি চর্চায় কেন্দ্রের এহেন উদাসীন আচরণে আক্কেল গুড়ুম আম-বাঙালির।
গত মাসের গোড়ার দিকে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ঘটা করে প্রকাশ করেন ডিজিটাল ক্যালেন্ডার এবং ডায়েরি। কিন্তু তখন তা আমজনতার ব্যবহারের জন্য ছিল না। সরকারের তরফে জানানো হয়, দিন কয়েক পরে ওই অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে। সেই সুযোগ এখন পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অ্যাপটি যাতে দেশের অধিকাংশ নাগরিক মাতৃভাষায় দেখতে ও পড়তে পারেন, তার জন্য ইংরেজির পাশাপাশি ১১টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে তথ্যগুলি। সেই অ্যাপেও গোড়াতেই রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করতে ভোলেনি কেন্দ্র। ঠাঁই পেয়েছে কবিগুরুর লেখার কিছু অংশ। বাকি জায়গায় শুধুই নরেন্দ্র মোদির নানা উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ড সাজানো। মোদি কোন কোন দিনে কী কী প্রকল্প চালু করেছেন, তার উল্লেখ রাখা হয়েছে অ্যাপে। এর পাশাপাশি ক্যালেন্ডারের তারিখগুলি যেমন থাকছে, তেমনই রাখা হয়েছে ছুটির দিনও। সেখানেই বলা হয়েছে, এ বছর, অর্থাৎ আগামী মে মাসের সাত তারিখে পালিত হবে রবীন্দ্রজয়ন্তী। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ওই দিন ২৩ বৈশাখ। রাজ্যের মানুষ বাংলা ক্যালেন্ডারের দিনক্ষণ নিয়ে সবসময় মজে থাকে না। কিন্তু পয়লা বৈশাখ, পঁচিশে বৈশাখ কিংবা বাইশে শ্রাবণ নিয়ে কখনও দিকশূন্য হয়নি বাঙালি। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার এই সব বিশেষ দিন নিয়ে কী করে এত উদাসীনতা ও অযত্নের পরিচয় দিল, তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই।
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এমন ভুল এই প্রথম নয়। এর আগেও পর্যটনমন্ত্রক একটি অ্যাপ তৈরি করেছিল। ‘ইনক্রেডেবল ইন্ডিয়া’ শীর্ষক সেই অ্যাপেও ছিল ভুলে ভরা ভুরি ভুরি তথ্য। বাংলাকেন্দ্রিক এমন সব বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছিল যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়েছিল বাঙালির। আবারও তার পুনরাবৃত্তি হল তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের ক্যালেন্ডারে। আর তাতেই ফের স্পষ্ট হয়ে গেল বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের মাখামাখি আসলে ফোঁপরা দেখনদারি। যা ক্রমশ হাস্যকর ও বিরক্তিকর হয়ে উঠছে বাংলার মানুষের কাছে।