সিপিএমেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব – দেওয়াল লিখন মুছলেন দলের কর্মীরাই
প্রার্থী পছন্দ না হলে বিক্ষোভ দেখানো দক্ষিণপন্থী দলগুলির বহুদিনের রেওয়াজ। কিন্তু প্রকাশ্যে সিপিএমে (CPM) এমন বিদ্রোহ খুব কমই দেখা গিয়েছে। অতীতে যা কোনওদিনই হয়নি সেটাই এবারের নির্বাচনের আগে হল জলঙ্গিতে (jalangi)। প্রতীক এঁকে দেওয়াল লিখনের পরও তা মুছে ফেলল বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। তারা এখানেই থেমে থাকেনি, দলীয় অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছে। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর সংঘাত আরও বড় আকার নেবে বলে তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখছে। আর তাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গিয়েছে দলের জেলা নেতাদের।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, জলঙ্গিতে আবু বাক্কর গোষ্ঠীর সঙ্গে ইউনুস সরকারের লড়াই বহুদিনের। ইউনুস সাহেব দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি দলের প্রতীকে জিতে চারবার বিধায়ক হয়েছিলেন। এবারও তাঁকে প্রার্থী করা হবে তা ধরে নিয়েই তাঁর অনুগামীরা দেওয়াল লিখন শুরু করে দেয়। কিন্তু দল অন্য আর এক নেতাকে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী করার পরিকল্পনা করেছে। তা জানতে পেরেই দলের একটা বড় অংশই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। প্রকাশ্যেই তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করছে। দলের কর্মী ডালিম শেখ বলেন, ইউনুস সাহেবকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে প্রার্থী করলে দলের পরাজয় নিশ্চিত। দলের স্বার্থে আমরা তাঁকে প্রার্থী হিসেবে চাইছি। যদিও ইউনুস সাহেব বলেন, আমি আর প্রার্থী হতে চাই না। সেটা দলকে জানিয়ে দিয়েছি।
দলের একাংশের দাবি, সিপিএমের অন্দরমহলে দ্বন্দ্ব আগেও ছিল। প্রতিটি জেলাতেই তাদের আলাদা লবি রয়েছে। আগে প্রার্থী পছন্দ না হলে নেতারা জেলা কমিটি বা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ক্ষোভ উগরে দিতেন। কখনোই তা প্রকাশ্যে আসত না। দল কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কোনও নেতার অনুগামীরা প্রকাশ্যে রাস্তায় নামত না। অবশ্য ২০১৩সালে ব্যতিক্রম হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরে। দাপুটে সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠকে দল বহিষ্কারের পর তাঁর অনুগামীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পার্টি অফিসে ভাঙচুর ও দলের জেলার নেতাদের হেনস্তা করা হয়। কিন্তু তারপর আর সেভাবে বিশৃঙ্খলার ছবি সামনে আসেনি। কয়েক বছর পর নির্বাচনের দোরগোড়ায় জলঙ্গিতে দলের বেআব্রু রূপ ফের প্রকাশ্যে এল। স্থানীয়রা বলেন, মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্র বামেদের খাসতালুক হিসেবে পরিচিত। ২০১৬সালের নির্বাচনেও তারা জয়ী হয়েছিল। এখনও এই কেন্দ্রে তাদের সংগঠন যথেষ্টই মজবুত রয়েছে। কিন্তু দলের এই নজিরবিহীন বিদ্রোহের পর পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়ে তাদের দলের কর্মীরা ধন্দে রয়েছেন। দলের এক নেতা বলেন, ডোমকল ও জলঙ্গি ভরসার জায়গা ছিল। অন্য বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই দায়।
আনিসুর রহমান না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ডোমকলে সংগঠন ধাক্কা খেয়েছে। জলঙ্গিতেও এই অবস্থা চলতে থাকলে জেলায় খাতা খোলা কঠিন হয়ে পড়বে। জেলা নেতারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে আদৌ কাজ হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দুই গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে কাউকে প্রার্থী করা হলে ক্ষোভ প্রশমিত হবে না। আবার ওই দুই নেতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে প্রার্থী করা হলে জোরদার লড়াই দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই এখানে দলের অবস্থা শাঁখের করাতের মতো। সিপিএমের এমন চেহারা দেখে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না শাসকদল। দলের নেতা অশোক দাস বলেন, এই তো সবে শুরু হয়েছে। আগামী দিনে সব কেন্দ্রে তাদের এমন লড়াই সামনে আসবে। জলঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রে আর ওদেরকে মানুষ চাইছে না। ওদের কর্মীরাও সিপিএমের পতন চাইছে। সেই কারণেই তারা রাস্তায় নেমেছে।