মিলছে না হিসেবে, নন্দীগ্রামে পরাজয় নিশ্চিত? আশঙ্কা শুভেন্দুর গলায়
নন্দীগ্রামে হেরে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন শুভেন্দুর? হাফ লাখ ভোটে মমতাকে হারাবেন বলেও আচমকাই ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিলেন তিনি। সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) এখন বিজেপির সবথেকে চর্চিত মুখ বঙ্গে। বিজেপি-তে শুভেন্দুর সঙ্গে আরও একঝাঁক তৃণমূল বিধায়ক, সাংসদ, বাম বিধায়ক, এমনকী সংখ্যালঘু নেতারাও যোগ দেন। মেদিনীপুরের সভা থেকে নিজের সংক্ষিপ্ত ভাষণে ‘ভাইপো হঠাও’ স্লোগানও দেন শুভেন্দু। ডাক দেন ‘তোলাবাজ’ হটানোরও। টেট বা শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও দুর্নিতীর কথা বলেন তিনি। চেয়েছেন বামপক্ষের সমর্থকদের সমর্থন। এহেন শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election 2021) প্রার্থী হয়েছেন তাঁর চেনা এবং জেতা আসন নন্দীগ্রাম থেকে। হাফ লাখ ভোটে হারাবেন, চ্যালেঞ্জ করেছেন একদা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে। কিন্তু আচমকাই যেন ছন্দপতন।
শুভেন্দু অধিকারী যখন জেনেছিলেন, সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে আব্বাসের দল প্রার্থী দিচ্ছে নন্দীগ্রামে (Nandigram) তখন নিজের জয় নিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলেন তিনি। নন্দীগ্রামে প্রার্থী হতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করেন নি। কিন্তু আচমকাই বদলে গেছে অঙ্ক। সিপিআই এর আসন আব্বাস কে ছাড়ার জায়গায় নিজেরাই প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। তাই নিজের জয় নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করলেন শুভেন্দু নিজে। এদিন মঞ্জুশ্রীর মোড়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আগে কংগ্রেসের সাথে লড়াই হত কমিউনিস্টদের। পরে কমিউনিস্ট রা লড়াই করত তৃণমূলের সাথে। এখন ভারতীয় জনতা পার্টির সাথে বাকি সবার লড়াই।” এরপরেই নন্দীগ্রামে সিপিএম প্রার্থী প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, “নন্দীগ্রামে সিপিএমের প্রার্থী কে ঠিক করে দিয়েছে, তৃণমূল?”
সিপিএম প্রার্থী কেন শুভেন্দুর মাথা ব্যাথার কারণ? বিশ্লেষকদের মতে, আব্বাস প্রার্থী দিলে মমতার মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে সিঁদ কাটত আইএসএফ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই জয়ের রাস্তা মসৃণ হত শুভেন্দুর। কিন্তু সিপিএম প্রার্থী দেওয়ার কারনে সেই পথ বন্ধ হল। উল্টে সিপিএম প্রার্থী দেওয়ার ফলে যদি বিজেপিতে যাওয়া বাম ভোটের সামান্য অংশও ফিরে আসে তাহলে আখেরে লাভ হবে মমতার। কারণ গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির যে ভোট ব্যাঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে তা মূলত বামেদের ভোটেই। অঙ্ক কি বলছে?
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক হন শুভেন্দু। তখন তিনি প্রায় ৮১ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। ওই বছরেই তমলুক লোকসভার উপ-নির্বাচনে শিশির অধিকারীর অন্য পুত্র দিব্যেন্দুকে টিকিট দেন মমতা। তমলুকের সাংসদ নির্বাচিত হন দিব্যেন্দু অধিকারী। সে সময় নন্দীগ্রাম থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার লিড পেয়েছিলেন দিব্যেন্দু অধিকারী। অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারীর থেকে প্রায় ৬০ হাজার বেশি ভোটের লিড পেয়েছিলেন তিনি। পরে ২০১৯ লোকসভায় তৃণমূলের লিড নেমে আসে ৬৮ হাজারে। বিজেপি-র ভোট ২০১৬ সালে যেখানে ছিল ১০ হাজারের কিছু বেশি, তা ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ৬২ হাজারের বেশি!
শুভেন্দুর ধারণা তৃণমূলের প্রতি বিতৃষ্ণা থাকলেও বিজেপির বাড়বাড়ন্ত ভোট ব্যাঙ্ক থাকবে তাঁর দিকেই। তৃণমূলের (Trinamool) ৬৮ হাজারের মার্জিন পেরিয়ে যেতে গেলে তৃণমূল থেকে ৩৪ হাজার ভোট কমিয়ে তা যোগ করতে হবে গেরুয়া শিবিরে। অঙ্ক কষা চলছে নিপুণ হাতে। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, শুভেন্দু ব্যাক্তি হিসেবে নাকি কমপক্ষে ২৫ হাজার ভোট টানবেন তৃণমূল থেকে। সেক্ষেত্রে তৃনমূলের ৬৮ হাজারের মার্জিনকে নামিয়ে আনা যাবে ১৮ হাজারে। এদিকে শুভেন্দু শিবিরে অন্য একটি ভরসার নাম ছিল আব্বাস সিদ্দিকি। শুভেন্দু ভোট ম্যানেজারদের বিশ্বাস ছিল তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক থেকে আব্বাস নিজের ক্যারিস্মায় টেনে নেবেন অন্তত ২০ হাজার ভোট! সুতরাং এই ভোট বিজেপিতে যুক্ত না হলেও তৃণমূলের মার্জিন পরিনত হবে ঘাটতি তে! অর্থাৎ ২ হাজার ভোটে পিছিয়ে যাবে তৃণমূল!
কিন্তু সেই অঙ্ক কার্যত ঘেঁটে দিয়েছে সিপিএম। ২০১৯ লোকসভায় বিজেপির যে ৫২ হাজার ভোট বেড়েছিল নন্দীগ্রামে তাঁর প্রায় ৮০ শতাংশ ছিল বামেদের ভোট। এখন বামেদের মূল দল সিপিএম তাঁদের লড়াকু যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় কে প্রার্থী করে দেওয়ায় বিজেপিতে চলে যাওয়া ভোটের ৫ শতাংশও সিপিএমে ফিরে আসে তাহলে সমূহ বিপদ শুভেন্দুর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে হাফ লাখ ভোটে হারানো অনেক দূর নিজেই ওই ব্যাবধানে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা এখন।