কমিশনের খেয়াল খুশিতে আট দফায় ভোট, খরচ বইতে হবে রাজ্যকে
আট দফার নির্বাচন (West Bengal Elections 2021)। ভোট দেবেন প্রায় ৭ কোটি ৩৩ লক্ষ ভোটার। আসছে বিপুল পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী। গণতন্ত্রের উৎসব আয়োজনে শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্যই এলাহি ব্যবস্থা। তাতে কত খরচ হবে? এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। একে, করোনা আবহে সতর্কতার জন্য ব্যয়ের বহর লাফিয়ে বেড়েছে। তার উপর হিসেব বলছে, শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য খরচের ক্ষেত্রে অতীতের সব নির্বাচনকে ছাপিয়ে যাবে এবারের বিধানসভা ভোট। এ রাজ্যে ২০১৬ সালের বিধানসভা এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট আয়োজনের মোট ব্যয় ৬০০ কোটি ছাড়ায়নি। কিন্তু এবার সেই অঙ্কটা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে চলে যাবে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্তারা। অর্থাৎ, প্রত্যেক ভোটারের মাথাপিছু খরচ প্রায় ১৩৬ টাকা। করোনার কারণে রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। সেখানে এই বিপুল আর্থিক বোঝা দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে অর্থদপ্তরের। বাংলার মানুষের করের টাকায় ভোটে রেকর্ড ব্যয় নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।
সাধারণত বিধানসভা ভোটের খরচ মেটাতে হয় রাজ্য সরকারকে। লোকসভা নির্বাচনে ব্যয়ের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। কেন্দ্রীয় বাহিনীর লজিস্টিক খরচ অর্থাৎ থাকা-খাওয়া, পরিবহণের ব্যবস্থা করতে হয় রাজ্য প্রশাসনকে। এবার ভোটের আগে থেকে যে হারে বাহিনী আসছে, তাতে স্পষ্ট এই খাতে লাগামছাড়া অর্থব্যয় হবে রাজ্যের। সেই সঙ্গে করোনা বিধি পালনের জন্য ভোটারদের ডান হাতের গ্লাভস, মাস্ক, স্যানিটাইজার, থার্মাল গান মজুত রাখার রাহাখরচ। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে বাহিনী বাদ দিয়ে শুধু প্রশাসনিক খরচ হয়েছিল ৩৫০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এবারের বাজেটে ভোট আয়োজনের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা। তার সঙ্গে যুক্ত হবে বাহিনীর জন্য খরচ। ফলে অঙ্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
ইতিমধ্যে রাজ্যে ২৯৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে গিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে চলে আসবে আরও ৪১০ কোম্পানি। এই বিশাল সংখ্যক বাহিনীর জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিসের পক্ষ থেকে অর্থদপ্তরের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। এর আগে ভোট প্রস্তুতির জন্য ১০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করেছে রাজ্য। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এবারের ভোটে প্রাথমিকভাবে ৭০০ কোম্পানি বাহিনীর জন্য ৩৬১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরে বাহিনীর সংখ্যা বাড়ায় তা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এবার খরচের বহর বাড়ার আরও কারণ করোনা সতর্কতা। রাজ্যে মোট বুথের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার ৯১৬। সব বুথ একতলায় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বত্র একতলায় ঘর না পাওয়ায় বেশ কিছু অস্থায়ী কাঠামোর বুথ বানানোর পূর্তদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সেই সব বুথ পরিকাঠামো তৈরির পাশাপাশি রয়েছে সাড়ে ছ’লক্ষ ভোটকর্মী, সাধারণ ও পুলিস পর্যবেক্ষকের জন্য খরচ। তার উপর রয়েছে গাড়ি জোগাড় করার সমস্যা। সব মিলিয়ে ব্যয়ের অঙ্ক অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে যেতে চলেছে বলে অনুমান কমিশনের কর্তাদের। সরকারি সূত্রে খবর, আগামী দু’টি অর্থবর্ষে এই টাকা মেটানোর কথা জানিয়েছে অর্থদপ্তর।