নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সুরক্ষায় গাফিলতি ছিল, মানল কমিশন
নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ‘পরিকল্পিত হামলা’ হয়েছে—তৃণমূলের এই অভিযোগ স্বীকার করল না নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নিরাপত্তায় যে বিস্তর গাফিলতি ছিল, তা স্পষ্টতই মেনে নিল তারা। যার পরবর্তী পদক্ষেপই হল রাজ্য তথা জেলার তিন প্রশাসনিক কর্তার অপসারণ। রবিবার দিল্লির নির্বাচন সদনে কমিশনের ফুল বেঞ্চের বিশেষ বৈঠকের পর বরখাস্ত করা হল রাজ্যের ডিরেক্টর সিকিওরিটি আইপিএস বিবেক সহায়কে। স্রেফ সরিয়ে দেওয়াই নয়, দায়িত্বে অবহেলার দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে এক সপ্তাহের মধ্যে চার্জ গঠন করার নির্দেশও দিল কমিশন। পুলিসের ডিজির সঙ্গে আলোচনাক্রমে ওই পদে যোগ্য অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বলেছে কমিশন। একইসঙ্গে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক বিভু গোয়েলকে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নিয়েছেন ২০০৫ ব্যাচের আইএএস স্মিতা পান্ডে। বিভুবাবুকে নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত কাজের বাইরে পোস্টিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সাসপেন্ড করা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিস সুপার প্রবীণ প্রকাশকেও। তাঁর জায়গায় এসেছেন সুনীল কুমার যাদব। গত ১০ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কেন গাফিলতি ছিল, এই প্রশ্ন সামনে রেখে প্রবীণ প্রকাশের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন (Election Commission)এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে বেরনো কোনও ভিভিআইপি প্রার্থীর নিরাপত্তায় এ ধরনের গাফিলতির ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তাই তারকা প্রচারকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষভাবে সজাগ থাকতে পাঁচ ভোট-রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে এদিনই চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিশেষ জোর অবশ্যই বাংলায়। তাই নির্বাচনী পর্বে রাজ্যে অতিরিক্ত একজন স্পেশাল পুলিস পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফুল বেঞ্চ। অর্থাৎ, এখন থেকে নির্বাচন পর্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিবেক দুবের পাশাপাশি পাঞ্জাব পুলিসের প্রাক্তন ডিজি (ইন্টেলিজেন্স) অবসরপ্রাপ্ত অনিলকুমার শর্মা নিযুক্ত হলেন বাংলায়।
নন্দীগ্রামের (Nandigram) ঘটনায় কেবল ডিরেক্টর সিকিওরিটিই নন, তাঁর নীচের পদাধিকারীদেরও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত পদাধিকারী আধিকারিকদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধেও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং পুলিসের ডিজি একটি কমিটি তৈরি করবেন। তাঁরা আগামী ১৭ মার্চ বিকেল ৫টার মধ্যে সেই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। এই সব পদক্ষেপ কার্যকর হল কি না, তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিশনে জানাতে হবে। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে কমিশনের নির্দেশ, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নন্দীগ্রামের ঘটনার তদন্ত শেষ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। তদন্তের বিস্তারিত রিপোর্ট আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে দিল্লির অশোক রোডে কমিশনের সদর দপ্তরে পাঠাতে হবে মুখ্যসচিবকে।