প্রার্থী নিয়ে বিজেপিতে কোন্দল অব্যাহত
রাত দশটা থেকে সাড়ে তিনটে পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক। প্রবল ভর্ৎসনা। তারপরও প্রার্থী-বিক্ষোভ প্রশমনের সমাধানসূত্র বের করতে পারলেন না অমিত শাহ। দ্বিতীয় দফার প্রার্থী ঘোষণার পর ছাইচাপা আগুন প্রকাশ্যে। অপছন্দের প্রার্থী মানতে না চেয়ে বিক্ষোভ-ভাঙচুর অব্যাহত। তারই সূত্র খুঁজতে সোমবার রাতে গুয়াহাটি থেকে দিল্লি না ফিরে কলকাতায় চলে আসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন ছিল মূলত দু’টি—ঝাড়গ্রামের সভায় লোক হয়নি কেন? এবং জেলায় জেলায় বিজেপি (BJP) প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে কেন? এই দুই ইস্যুতে রাতভর বঙ্গ বিজেপিকে কার্যত তুলোধোনা করেন অমিত শাহ। তারপর বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে ডেকে পাঠান দিল্লিতে। মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই চার্টার্ড বিমানে চাপিয়ে তাঁদের দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিটির বৈঠকের আগে বুধবার সকালে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার বাড়িতে বৈঠক হবে। সেখানেও উপস্থিত থাকবেন অমিত শাহ।
সোমবার ঝাড়গ্রামে জনসভা ছিল অমিত শাহের (Amit Shah)। কিন্তু সভাস্থলে লোক না হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর সেখানে পৌঁছননি। সরকারিভাবে অবশ্য জানানো হয়, হেলিকপ্টার বিভ্রাটের জন্য অমিত শাহ যেতে পারছেন না। সে ব্যাপারেই রাতের বৈঠকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। এখন থেকে ‘হেভিওয়েট’ কোনও কেন্দ্রীয় নেতা বা মন্ত্রীর কর্মসূচি থাকলে আশপাশের চার থেকে পাঁচটি বিধানসভা এলাকায় আর কোনও নেতা যাবেন না বলে নির্দেশ জারি করেছেন অমিত শাহ।
এদিনও প্রার্থী নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। মন্দিরবাজার, বিষ্ণুপুর, ক্যানিং পশ্চিম, বাগনান, উলুবেড়িয়া সহ বহু বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বদলের দাবিতে উত্তাল হয় বঙ্গ বিজেপির হেস্টিংস অফিস। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিসের কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পুলিসকে লক্ষ করে ইট ছোড়ে বিক্ষুব্ধরা। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে, পুলিসকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এর পাশাপাশি তুমুল বিক্ষোভ হয় হাওড়ার পাঁচলা, হুগলির ত্রিবেণীতে। চন্দননগর ও পাণ্ডুয়ায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে পার্টি অফিস ভাঙচুর হয়। উত্তরবঙ্গেও ক্ষোভের আঁচ ছিল পুরোদমে। সিতাই, কালচিনিতে প্রার্থী বদলের দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ হয়। আর এই সব ঘটনাই উদ্বেগ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। অমিত শাহ সাফ বলেছেন, এইসব অসন্তোষ অবিলম্বে সামাল দিতে হবে। বিক্ষুব্ধ বিধানসভা কেন্দ্রগুলি থেকে পাঁচজন করে প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন রাজ্য নেতারা। যদিও বিজেপির এক শীর্ষ নেতার দাবি, বললেই তো আর প্রার্থী বদল হবে না! তবে বিক্ষুব্ধরা এসে বৈঠক করবেন, তাতে অনেকটা সময় খরচ হবে। ততদিনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের তারিখ পেরিয়ে যাবে। রাজ্য নেতাদের উপর খুব একটা ভরসা আর রাখছেন না অমিত শাহ। তাই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, গোটা নির্বাচনী কৌশল এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত—সবটাই এখন থেকে ভিন রাজ্যের নেতাদের কাঁধে। এখন নজর অবশ্যই দিল্লির বৈঠকে। আগামী ১৭ মার্চ আরও দু’দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতে পারে। তারপর কি ক্ষোভ আরও বাড়বে? এই প্রশ্নে এখন প্রবল অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।