দেশ বিভাগে ফিরে যান

দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণ ছাড়ালো এক লক্ষের মাত্রা

April 5, 2021 | 2 min read

 দেশজুড়ে করোনার পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে। রবিবার সকালেই স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছিল,  গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ হাজার ২৪৯ জন সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। তারপর এদিন রাতেই মিলল আরও উদ্বেগজনক তথ্য। অসমর্থিত সূত্রের খবর, রবিবার সকাল থেকে রাত ১২টার মধ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যাটা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। দৈনিক সংক্রমণের বিচারে এটা রেকর্ড। গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর একদিনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৭ হাজার ৮৯৪ জন, যা এতদিন ছিল সর্বোচ্চ। রবিবার দিনভরের হিসেব বলছে, নতুন করে করোনার শিকার ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭৯৪ জন। নতুন মিউটেশনের জেরে যে হারে সংক্রমণের রেখাচিত্র ঊর্ধ্বমুখী, তাতে একেবারেই স্বস্তিতে নেই সরকার। এদিন দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্র থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ যে যার নিজের রাজ্যে ফেরা শুরু করেছে। কারণ, দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ বাড়ছে। তাই আচমকা লকডাউন ঘোষণার আতঙ্ক গ্রাস করছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। গত দু’সপ্তাহে গোটা দেশে একদিনে যে সংক্রমণ হয়েছে, তার ৫৭ শতাংশই মহারাষ্ট্রে। একদিনে মৃত্যুর ক্ষেত্রেও গোটা দেশের ৪৭ শতাংশ এখানেই। ছত্তিশগড়, পাঞ্জাবের পরিস্থিতিও তথৈবচ। 


তাই দেশের এই তিন রাজ্যে দ্রুত কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উপর্যুক্ত তিন রাজ্যের পাশাপাশি গুজরাত, কর্ণাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানাতেও সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ রুখতে মহারাষ্ট্র সরকার নাইট কার্ফুতে জোর দিয়েছে। পাশাপাশি শুক্রবার রাত ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৭টা পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছে। মুম্বইয়ের পুরসভা এলাকায় ৬০০ বাড়ির সাড়ে ৭ হাজার ফ্লোর সিল করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য রাজ্যের বিষয়। তাই কেন্দ্র পরামর্শ দিলেও আদতে রা‌জ্য঩কেই কড়া হতে হবে। রা‌জ্য চাইলে তার মতো করে লকডাউন করতে পারে।’ তবে এখনই দেশজুড়ে ফের আচমকা লকডাউন ঘোষণার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। 


করোনা সংক্রান্ত কেন্দ্রের উচ্চপর্যায়ের বিশেষ কমিটির অন্যতম সদস্য তথা নয়াদিল্লি এইমসের ডিরেক্টর ডাঃ রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, গত বছর যে হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছিল, তার চেয়ে এবার অনেক দ্রুত গতিতে এগচ্ছে করোনা। ভ্যাকসিন এসে যাওয়ার পর কোভিডের বিষয়ে মানুষ একটু গাছাড়া আচরণ করছেন। প্রয়োজন না থাকলেও ভিড়ে মিশছেন। এভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণ আরও বাড়বে। 
আইসিএমআর জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে কয়েক হাজার বার নিজের চরিত্র বদলেছে করোনা। এর জেরে ভ্যাকসিন ভাইরাসকে কতটা কাবু করতে পারবে, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তির থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা অবশ্য প্রায় শূন্য। টিকা নিলেই কেউ আর করোনা আক্রান্ত হবেন না, এমনটাও নয়। তবে তাতে শারীরিক অবস্থা ভয়াবহ হবে না। রোখা যাবে মৃত্যুও, বলছেন আইসিএমআরের মহামারীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডাঃ সমীরণ পাণ্ডা। এই মৃত্যু রোখার বিষয়টিতেই জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘করোনার মহামারী পরিস্থিতি এবং টিকাকরণ কর্মসূচি’ শীর্ষক ইস্যুতে রবিবার ডাকা জরুরি বৈঠকে তিনি বলেছেন, যেভাবেই হোক মৃত্যু রুখতে হবে। তার জন্য হাসপাতালে প্রয়োজনীয় শয্যা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। একইসঙ্গে করোনার পরীক্ষা, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা কমপক্ষে ২৫ জনকে দ্রুত চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসা, কোভিড বিধি এবং টিকা, এই পাঁচটি বিষয়ে কোনও গাফিলতি চলবে না। উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ১০০ শতাংশ মাস্ক ব্যবহারে জোর দিয়ে ব্যাপক হারে সচেতনতামূলক প্রচার শুরু হবে। কাল ৬ এপ্রিল থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত এ ব্যাপারে দেশজুড়ে প্রচারাভিযান শুরু হচ্ছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#India, #covid19

আরো দেখুন