উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

বিজেপির প্রার্থী কে, জানেনই না চা বাগানের শ্রমিকরা

April 5, 2021 | 2 min read

কালচিনির(Kalchini) চা বলয়ের আদিবাসী বাসিন্দারা মনেপ্রাণে চান ভোটে জিতে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তিনিই বসুন মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে। মান্তি কিস্কু, আশ্রিতা ওঁরাও, মালতী মাহাত, বিমলা টোপ্পো সহ মাঝেরডাবড়ি চা বাগানের আরও হাজার দু’য়েক চা শ্রমিকের(Tea Garden Workers) সমবেত ইচ্ছা এটাই। কিন্তু কেন? তাঁদের স্পষ্ট জবাব, সমাজে বহুদিন অবহেলিত হয়েছিলাম আমরা। মাত্র ৬৭ টাকা দিনমজুরিতে কাজ করেছি বছরের পর বছর। পরিবারের সকলে দু’বেলা পেটভরে খেতে পেতাম না। এখন মজুরি পাই দিনে ২০২ টাকা। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিনা পয়সায় রেশন পাচ্ছি। চিকিৎসা পাচ্ছি। একটু পয়সার মুখ দেখতে পাওয়ায় এখন বাড়িতে টিভি কিনেছি। তাই মমতাদিদিকেই আবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পেতে চাই।

কালচিনিতে মাঝেরডাবড়ির ওই চা বাগান আয়তনে অনেকটাই বড়। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ২৩০০ জন কর্মী। এরা সকলেই মহিলা। জানতে চাইলাম শুক্রবার তো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জনসভা করতে এসেছিলেন। সেখানে গিয়েছিলেন? আশ্রিতা বললেন, কেন যাব? ওনাদের দল তো আমাদের জন্য কিছুই করেনি। বিজেপি প্রার্থী কে, তাই জানি না। ওদের কেউ আসেনি আমাদের কাছে। আর তৃণমূলের নাম শুনেছেন? এবার যেন চোখে মুখে হাসি ফুটল মান্তির। বললেন, মমতাদিদির নাম শোনেনি এমন কেউ আছে নাকি? কথার ফাঁকেই অন্য বাগিচা শ্রমিকদের খাবার জল দিচ্ছিলেন। বাগানে চা পাতা তুলতে তুলতে অনেকেরই জলতেষ্টা পায়। তাঁদের জল দিতে এক কর্মী সেই কাজে নিযুক্ত থাকেন। ওই বাগানে সেই কাজ করছিলেন মান্তি। বললেন, এই বাগানে এমনও পরিবার রয়েছে, যাদের ৪ জন চা বাগানে কাজ করেন। দিনে তাদের আয় ৮০৮ টাকা। কোনওদিন ভাবতেও পারিনি। এত টাকা রোজগার করতে পারব। এসবই মমতাদিদির জন্য হয়েছে। অমিত শাহের সভাতেও আদিবাসীদের হাজিরা কম থাকা নিয়ে নানারকম চর্চা চলছিল। সেই প্রশ্ন তুলতেই বিমলা বললেন, একসময় খেতে পেতাম না। এখন আমার বাড়িতে টিভি আছে। গ্যাস আছে। দুই মেয়ে, দুই ছেলে। বাড়িতে চারটি সাইকেল। কন্যাশ্রী পেয়েছে। স্মার্ট ফোন পেয়েছে এক ছেলে। স্কুলের পোশাক, জুতো, বই খাতা, পেন্সিল সবই বিনা পয়সায় দিয়েছে সরকার। এক আদিবাসী পরিবারের কাছে এসব তো এতদিন স্বপ্নই ছিল। আজ তা পূরণ হয়েছে। বাড়িতে বিনা পয়সায় রেশন পাচ্ছি. স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছি। বাংলা আবাস যোজনায় ঘর পেয়েছি। তাই আবার দিদিকেই চাই। তাহলে আমাদের আরও ভালো হবে।

কালচিনিজুড়ে প্রচুর চা বাগান। চা শ্রমিকও অসংখ্য। তার মধ্যে পাহাড়ি আদিবাসীও রয়েছে। এবার ভোটের ময়দানে হার জিতের নির্ণায়ক এই আদিবাসীরাই। তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন পাশাং লামা। আর বিজেপির বিশাল লামা। মাঝেরডাবড়ির মিঠু ওঁরাওকে বিশালের নাম বলতেই, তাঁর পাল্টা প্রশ্ন কে তিনি? তাঁকে চিনিও না। দেখিও নি। বলেই আশপাশের অন্যদের কাছেও জানতে চাইলেন ওই প্রার্থীর পরিচয়। সকলেই আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, কেউ একজন হবে হয়তো। 


বিজেপির ইস্তাহারে বলা হয়েছে, বাংলায় তারা জিতলে চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা করা হবে।  চা বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধরও ছিলেন সেখানে। ওঁরাও, টোপ্পোরা কিছু বলার আগেই চিন্ময় বললেন, একথা অসমে ভোটের আগেও বলা হয়েছিল। কিন্তু হয়নি। 
আর বিমলা বলে উঠলেন, মমতাদিদি এত দিয়েছেন, আর শুনেছি ওরা (বিজেপি) নাকি উজ্জ্বলা গ্যাস দিচ্ছে, কই আমরা তো পাইনি। সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে গ্যাস কিনতে হয়েছে।


একসময় বামেদের ভোটব্যাঙ্ক ছিল এই আদিবাসী পরিবারগুলো। সে কথা তুলতেই আশ্রিতা বললেন, হ্যাঁ। বহুদিনই আমরা লাল পার্টির পাশে ছিলাম। কিন্তু এখন তো আর তাদের দেখতেই পাই না। তৃণমূল সরকার চালাচ্ছে। এক এক করে সব অভাব মিটছে আমাদের। তাই অন্য কোনও দলকে আর ভরসা করতে পারছি না। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#tmc, #Kalchini, #Tea Garden Workers

আরো দেখুন