কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

টালিগঞ্জে মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই

April 8, 2021 | 3 min read

টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো থেকে কয়েক পা এগলেই ইন্দ্রপুরী স্টুডিও। সবুজ লোহার গেট বরাবর বাউন্ডারি ওয়াল। চোখে পড়ল তৃণমূল প্রার্থীকে পুনরায় জয়ী করার আবেদন জানিয়ে দেওয়াল লিখন। সঙ্গে ছিল আরও দু’টি শব্দ, ‘টালিগঞ্জের রূপকার’। মঙ্গলবার দুপুরে ‘রানি রাসমণি’ ধারাবাহিকের শ্যুটিং চলছিল। স্টুডিওর ভিতরে ঢুকে কয়েকজনের সঙ্গে হল ভোটকেন্দ্রিক আলাপ। আর তাতেই বোঝা গেল, নেতাদের মতো অভিনেতাদের গায়েও লেগেছে ‘দলবদলু’ তকমা। নানা রঙে বিভক্ত টলিউড। 


স্টুডিওর বাইরে ভোটের হাওয়ায় মানুষের মুখে মুখে নানা গুঞ্জন। সুসজ্জিত বাসস্ট্যান্ডে সুচিত্রা সেনের ছবির নীচে চেয়ারে বসে এক ব্যক্তি বললেন, ‘দাদা, এবার ভোটে কিন্তু খেলা দেখাচ্ছেন অভিনেতারাই।’ তাঁর কথার প্রতিবাদ জানিয়ে পাশে বসা ওই এলাকার বাসিন্দা শ্যামল সাঁতরা বলে উঠলেন, ‘ভোট কিন্তু তারকাদের দেখে হয় না। ‌জয়-পরাজয় হয় উন্নয়নের নিরিখে।’


সেই উন্নয়নের শক্তিটা যেন এবার অরূপ বিশ্বাসের কাছে বাড়তি আশীর্বাদের মতো। তাঁর বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়ল অরূপ বিশ্বাসের ছবি দিয়ে তৃণমূলের প্রচার ফ্লেক্সে লেখা, ‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখব ছেড়ে দেব না। ছেড়ে দিলে কাজের মানুষ আর তো পাব না।’ তবে এই ‘কাজের মানুষ’কে হারাতে পাশেই বিজেপি লিখছে, ‘চলো পাল্টাই’। টালিগঞ্জে পাল্টে দেওয়ার এই খেলার সঙ্গে এবার জোর টক্কর উন্নয়নের। কার পালে লাগবে হাওয়া, জানিয়ে দেবে ২ মে।


লড়াইটা এবার অবশ্য ত্রিমুখী। এই লড়াইয়ে শামিল সিপিএম প্রার্থী, বরাবরের বামপন্থী, দেবদূত ঘোষ। এই লড়াইয়ে তিনি নিজেকে তুলে ধরেছেন ‘দিনবদলের দূত’ হিসেবে। টালিগঞ্জের এহেন ত্রিমুখী লড়াইয়ে কার পাশে থাকবেন মানুষ? ২ মে উত্তরের আগেই চলল উত্তর খোঁজার পালা। সাহেবকুটির মোড়ে লক্ষ্মণ পালের চায়ের দোকানের সামনে তুমুল আলোচনা। ঘটনাচক্রে সেদিনই ছিল তৃতীয় দফার নির্বাচন। শ্যাম বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে ভোটের আপডেট জেনে নিচ্ছিলেন বাকিরা। সেখানেই শংকর দাস বললেন, ‘১০ তারিখ টালিগঞ্জে ভোট। যে কাজ করেছেন, তাতে অরূপ বিশ্বাসের জিতে যাওয়ার কথা। টালিগঞ্জের রূপকার তিনি।’ পাশে দাঁড়ানো গোবিন্দ নস্কর বলে উঠলেন, ‘সিপিএম ও বিজেপির দুই প্রার্থীও কিন্তু খুব পরিচিত। দুজনেই ভালো ভোট টানবেন মনে হয়।’


টালিগঞ্জ সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল দীর্ঘদিন। ১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়। টালিগঞ্জ থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন প্রশান্ত শূর। তারপর ১৯৮২, ১৯৮৭, ১৯৯১ সালে পরপর নির্বাচিত হন তিনি। তাঁর হাত ধরে টালিগঞ্জ অঞ্চলে তরতরিয়ে বাড়তে শুরু করে সিপিএম। ধাক্কাটা আসে ১৯৯৬ সালে। সেবার কংগ্রেসের পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায় টালিগঞ্জ থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। পরের ভোটে ২০০১ সালে তিনি তৃণমূলের টিকিটে ওই কেন্দ্র থেকেই বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঠিক এখানেই ২০০০ সালে অরূপ বিশ্বাসের রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটে ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। ২০০৬ সাল থেকে টালিগঞ্জের বিধায়ক অরূপ। বিজয়গড়ের অফিসে বসে আত্মবিশ্বাসীর সুরে বললেন, ‘পূর্বতন আর সংযোজিত ওয়ার্ড নিয়ে নতুন টালিগঞ্জের সার্বিক উন্নয়ন করেছি। তাই সারা বছর যখন মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, তখন ভোট বাক্সেও তার প্রতিফলন ঘটবে বলে বিশ্বাস।’ 


তৃণমূলের তরফে চার পাতার একটি প্রচার পুস্তিকায় তুলে ধরা হয়েছে ‘অরূপ বিশ্বাস মানেই উন্নয়ন।’ সেখানে দেখানো হয়েছে, টালিনালা ও কেওড়া পুকুর খালের উপর ২৪টি ব্রিজ সম্প্রসারণ হয়েছে। এছাড়াও জলাধার নির্মাণ, ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন, রাস্তাঘাট, বৈদ্যুতিকীকরণ, নতুন থানা, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, শিক্ষার মানোন্নয়ন, আমার বাড়ি প্রকল্পে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়েছে।‌ উঠে এসেছে উদ্বাস্তু, কলোনি অঞ্চলের কথাও। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে অরূপের শপথ, ‘জীবন থাকতে বাংলায় এনআরসি, সিএএ, এনপিআর হতে দেব না।’


উন্নয়ন প্রশ্নে দেবদূত কটাক্ষ করে বললেন, ‘উন্নয়ন মানে শুধুই ‘নীল সাদা’ রং হয়েছে, আর কিছু নয়। এলাকায় ঘুরে দেখেছি, টালিগঞ্জের মানুষ কতটা জলকষ্টে ভুগছেন।’
প্রচারে ব্যস্ত থাকায় বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। দক্ষিণ কলকাতা বিজেপির সভাপতি শংকর সিকদার বলেন, ‘মানুষের মনোভাবে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, তৃণমূলের অপশাসন থেকে মুক্তি পেতে চাইছে।  ভারতীয় জনতা পার্টি আগামী দিনে সরকার করবে। টালিগঞ্জেও বিজেপির প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন।’


গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে এখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিপিএমের থেকে প্রায় ১৯ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। এছাড়াও তথ্য বলছে, এই বিধানসভা এলাকায় নয়টি ওয়ার্ড রয়েছে। তার সাতটিই তৃণমূলের দখলে। দু’টি বামেদের। লোকসভার ফলাফলে ন’টির মধ্যে আটটি ওয়ার্ডে এগিয়ে তৃণমূল। যদিও সিপিএম প্রার্থী দাবি করেছেন, প্রচারের আগে আমাদের ৫০ শতাংশ জয়ের সম্ভাবনা ছিল। এখন সেটা বেড়ে গিয়ে হয়েছে ৮০ শতাংশ। এমতাবস্থায় ভূমিপুত্র না হওয়া বিরোধী প্রার্থীকে গানের ছন্দে অরূপের খোঁচা, ‘তুম তো ঠহরে পরদেশী, সাথ কেয়া নিভাওগে, সুবহ পহেলি গাড়ি সে ঘর কো লৌট জাওগে….।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#tmc, #aroop biswas, #development

আরো দেখুন