খেলা বিভাগে ফিরে যান

করোনাকালে আইপিএল স্থগিত রাখা উচিত, উঠছে দাবি

April 28, 2021 | 3 min read

করোনার (Covid 19) দ্বিতীয় ঢেউ সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে ভারতে। দিন দিন বাড়ছে সংক্রামিতের সংখ্যা। চারিদিকে শুধুই স্বজন হারানোর কান্না। প্রতিটি মুহূর্তেই যেন পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে মৃত্যুর সঙ্গে। এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে বিনোদনের ক্রিকেট আইপিএল চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। প্রতিযোগিতা থেকে নাম প্রত্যাহারের পর ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন অজি ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু টাই। তিনি বলেছেন, শাহরুখ খান-প্রীতি জিন্টাদের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের উচিত আইপিএলে ব্যয় না করে কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেই অর্থ খরচ করা।

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শোয়েব আখতারের মতো প্রাক্তনরা করোনাকালে আইপিএল (IPL) আয়োজন নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। কিন্তু কে কার কথা শোনে? সমালোচনা নিয়ে মোটেও হেলদোল নেই বোর্ড কর্তাদের। বরং তাঁরা বুক বাজিয়ে বলে দিতে পারছেন, আইপিএল চলবে। গতবারও যখন করোনা চোখ রাঙাচ্ছিল, তখন টুর্নামেন্ট আরব দেশে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বোর্ড।

কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ খুবই বিপজ্জনক। ৯ এপ্রিল যখন আইপিএল শুরু হয়েছিল তখন সংক্রামিতের সংখ্যা ছিল দৈনিক এক লক্ষের কিছু বেশি। কিন্তু ক্রোড়পতি লিগ তিন সপ্তাহ গড়াতে না গড়াতেই, তা পৌঁছে গিয়েছে সাড়ে তিন লক্ষে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিদেশি ক্রিকেটাররা আইপিএলের আসর ছাড়তে শুরু করেছেন। এটা চলতে থাকলে বিদেশি ছাড়াই আইপিএল খেলতে হবে অনেক দলকে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অ্যাডাম জাম্পা ও ঝাই রিচার্ডসন দু’দিন আগেই জৈব সুরক্ষা বলয় থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু তাঁরা আটকে রয়েছেন মুম্বইয়ে। কারণ, অস্ট্রেলিয়া সরকার ভারতের সঙ্গে বিমান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দেশে ফেরার জন্য ছটফট করছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ক্রিস লিনও। তিনি অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছে বিশেষ বিমানের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তা মানা সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তিনি বলেছেন, ‘ভারতে আইপিএল খেলতে ব্যক্তিগতভাবে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। ওঁরা জাতীয় দলের হয়ে কোনও সফরে যাননি। নিজেদের চেষ্টাতেই তাঁদের দেশে ফিরতে হবে। আশা করছি, তাতে কোনও সমস্যা হবে না।’

এখনও আইপিএলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ১৪জন অস্ট্রেলীয়। এঁদের মধ্যে আছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার, দিল্লি ক্যাপিটালসের স্টিভ স্মিথ,কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্যাট কামিন্স। এছাড়া দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিং, আরসিবি’র কোচ সাইমন কাটিচও। ধারাভাষ্যকার হিসেবে ভারতে রয়েছেন ম্যাথু হেডেন, ব্রেট লি, মাইকেল স্লেটার ও লিসা স্থালেকর। তাই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। তাদের দেশের ক্রিকেটারদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার কারণে তারা ভারতীয় বোর্ডকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডও ভীষণ সক্রিয়। কিন্তু বিসিসিআই যেহেতু শক্তিশালী, তাই কেউ ঘাঁটাতে চাইছে না। কারণ, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচিয়েছিল এই বিসিসিআই। তার প্রতিদান তো দিতেই হবে! ইংল্যান্ড কিংবা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডও ভারতের কাছে একইভাবে ঋণী।

আগামী ৩০মে আইপিএলের ফাইনাল হওয়ার কথা। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে টুর্নামেন্ট চালিয়ে যাওয়া কঠিন বোর্ডের পক্ষে। হতে পারে আইপিএল বিনোদনের দারুণ এক উপাদান। কিন্তু পরিবার কিংবা প্রতিবেশী যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছে, তখন কি টিভির পর্দায় চার-ছক্কা দেখতে কারও ভালো লাগবে? ক্রিকেটারদের একাংশ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, আতঙ্কিত। অশ্বিনের মতো তারকা আইপিএল ছেড়েছেন করোনায় আক্রান্ত পরিবারের পাশে থাকতে। এই অবস্থায় কী ভালো খেলা মেলে ধরা সম্ভব? তাই মানবিকতার প্রশ্নে আইপিএল স্থগিত রাখা উচিত বলে মত তথ্যাভিজ্ঞ মহলের। এই ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। কিন্তু ভারতীয় বোর্ড কি সেই সাহসী পদক্ষেপ নেবে? এখনও পর্যন্ত তেমন ইঙ্গিত নেই। তবে আরও কড়াকড়ি হচ্ছে জৈব সুরক্ষা বলয়, কোভিড টেস্টের নিয়মও। আইপিএলের সিওও হেমাঙ্গ আমিন ক্রিকেটারদের উদ্দেশে একটি চিঠিতে লিখেছেন, ‘অনেকেই হয়তো ভাবছেন, টুর্নামেন্ট শেষ হলে কীভাবে দেশে ফিরবেন। আমরা আশ্বস্ত করছি, এই ব্যাপারে চিন্তার কিছু নেই। যতক্ষণ না সবাই সুষ্ঠুভাবে বাড়ি ফিরছে, সব দায়িত্ব বিসিসিআইয়ের। সরকারের সঙ্গে কথা বলে সব বন্দোবস্ত করবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। সবাইকে বাড়ি না ফেরানো পর্যন্ত টুর্নামেন্ট শেষ হবে না। আমরা এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। সকলেই মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। ভালো ক্রিকেট খেলে সেই চাপ কিছুটা লাঘব করার সুযোগ আপনাদের সামনে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#covid-19, #IPL

আরো দেখুন