উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

৬ বছর পর খুলল ডুয়ার্সের বাগরাকোট চা বাগান

July 2, 2021 | 2 min read

দীর্ঘ ছ’বছরের অচলাবস্থার অবসান হল। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নতুন মালিকানার হাত ধরে খুলে গেল ডুয়ার্সের মাল ব্লকে (Dooars Mal Block) বন্ধ থাকা বাগরাকোট চা বাগান (Bagrakot Tea Garden)। বৃহস্পতিবার বাগানে কাজে যোগ দিয়ে শ্রমিকরাও উচ্ছ্বসিত। সকালে পুজো দিয়ে বাগান খোলা হয়। বাগানে এদিন উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বুলুচিক বরাইক, নতুন মালিক সুব্রত বক্সি, শ্রমিক নেতা মণিকুমার ডার্নাল প্রমুখ। 


ফ্যাক্টরির গেট খুলে দিয়ে সুব্রতবাবু বলেন, ক’দিন আগে শ্রমদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। সেখানেই বাগানটি খোলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিশ্রুতি মতো এদিন বাগান খুলে দেওয়া হল। শ্রমিকদের বকেয়া ধাপে ধাপে মিটিয়ে দেওয়া হবে। এদিন থেকেই শ্রমিকদের পিএফ চালু করে দেওয়া হল। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পরিচর্যার অভাবে চা গাছ নষ্ট হয়েছে। এরপরেও শ্রমিকদের কথা ভেবে বাগানটি কিনেছি। শ্রমিকরা, শ্রমিক সংগঠনগুলি সহযোগিতা করলে আগের জায়গায় বাগান ফিরিয়ে নিতে যেতে পারব। প্রতিশ্রুতি মতো সবকিছুই শ্রমিকদের দেওয়া হবে। 


মন্ত্রী বুলুচিক বরাইক বলেন, রাজ্য সরকার বন্ধ বাগান খোলার ব্যাপারে আন্তরিক। তাই বন্ধ বাগরাকোট বাগান খুলে গেল। শ্রমিকরা এখন থেকে এই বাগানেই কাজ করবেন। বাগানটি একটি গ্রুপের ছিল। ওই গ্রুপের অধীনে থাকা বন্ধ অন্য বাগানও আইনি জটিলতা কাটিয়ে খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ডুয়ার্সের লিস নদীর ধারে অবস্থিত বাগরাকোট চা বাগান একসময় একটি নামী গোষ্ঠীর ছিল। এখানকার পাতা এ গ্রেডের তকমা পেয়েছিল। প্রচুর শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বাগানে সমস্যা শুরু হয়। শ্রমিকদের মজুরি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। রেশনও ঠিকমতো মিলছিল না। কর্তৃপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে যায়। পরবর্তীতে মজুরি বন্ধ হয়ে যায়। বাগানের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরিষেবা ধুঁকতে ধুঁকতে বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা চরম অনটনের মধ্যে দিন কাটতে থাকেন। কখনও একবেলা আবার কখনও গোটা দিন অভুক্ত থাকতে হয়। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে না পেরে কয়েকজন শ্রমিক মারাও যান। কিছু শ্রমিক কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন। কর্মহীন হয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া শ্রমিকরা একাধিকবার রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। শ্রমিকদের আর্থিক সমস্যা মেটাতে একটি পরিচালন সমিতি গঠন করে বাগানেটি একসময়ে চালু করা হয়েছিল। কিন্তু, তাতে শ্রমিকদের সমস্যা মেটেনি। তখন শ্রমিকরা সামান্য কিছু মজুরি পেলেও রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ পেতেন না। অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা ছিল না, পিএফ, গ্র্যাচুইটির বালাই ছিল না। 


অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছিল শ্রমিকদের। তাঁরা চাইছিলেন বাগানটি কোনও নতুন মালিক কিনে চালু করুন। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংগঠনগুলি উদ্যোগী হয়। বেশ কয়েকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় তারা। অবশেষে গত রবিবার শিলিগুড়ির দাগাপুরের একটি কোম্পানি বাগান অধিগ্রহণ করে খোলার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেয়। নতুন মালিক চুক্তি করেন। বাগান পরিচালনার দায়িত্ব মালিকপক্ষ বুঝে নেয়। নতুন মালিক সুব্রত বক্সি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ১ জুলাই থেকে বাগান খুলে দেবেন। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bagrakot tea garden, #dooars

আরো দেখুন