সমর্থকদের আবেগকে সম্মান জানিয়ে পরিমার্জিত চুক্তিতেও সই করছে না ইস্ট বেঙ্গল
লগ্নিকারি সংস্থা শ্রীসিমেন্টের (Shree Cements) পাঠানো পরিমার্জিত চুক্তিপত্রে সই না করার সিদ্ধান্ত নিল ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব (East Bengal)। শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্লাব তাঁবুতে আয়োজিত ক্লাবের কর্মসমিতির সভায় সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সভার পর ক্লাবের পক্ষ থেকে ২৪ জন সদস্যের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ্যে আনা হয়। উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে শ্রী সিমেন্টের পাঠানো প্রথম ডেফিনেটিভ এগ্রিমেন্টেও সই না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লাল-হলুদ কর্তারা। পরবর্তীকালে এই চুক্তির বয়ানে বদল আনার জন্য দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার ই-মেল চালাচালি হয়। শেষ পর্যন্ত মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধে কয়েকদিন আগে শ্রীসিমেন্ট এই পরিমার্জিত চুক্তি পাঠায়। তবে তাদের আগ্রাসনে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি।
সভার পর সচিব কল্যাণ মজুমদার জানান, ‘সংশোধিত চুক্তির প্রতিটি ছত্রে সদস্যদের অসম্মান করা হয়েছে। আমাদের কাছে সভ্য-সমর্থকদের আবেগের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এই চুক্তিপত্র মেনে সই করছি না। কারণ, সদস্যদের ভোটে আমরা নির্বাচিত। ক্লাব রক্ষার দায়িত্ব তাঁরাই আমাদের দিয়েছেন। কিন্তু এই চুক্তিপত্রে সই করলে ইস্ট বেঙ্গলের কোনও মৌলিক অধিকার থাকবে না। ক্লাবের যাবতীয় সম্পত্তি (মাঠ, তাঁবু ব্যবহারের অধিকার, লোগো ইত্যাদি) চিরতরে চলে যাবে লগ্নিকারী সংস্থার কাছে। চুক্তিপত্রে লেখা রয়েছে, সমর্থকরা ক্লাব তাঁবুতে ঢুকতে পারবেন না! অনুরাগীদের ট্রেসপাসার কীভাবে বলতে পারলেন লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা? এমনকী, সমর্থকরা তাঁবুতে ঢুকলে তাঁদের শাস্তি পেতে হবে!’
সংশোধিত চুক্তিপত্রের শেষ পাতায় লেখা রয়েছে যে সোম, বুধ ও শুক্রবার বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত সদস্যরা ক্লাব তাঁবুতে ঢুকতে পারবেন। সঙ্গে রাখতে হবে সদস্য কার্ড এবং যে কোনও সরকারী পরিচয়পত্র। সংখ্যায় বেশি হলে তাঁদের নিতে হবে বোর্ডের অনুমতি। এছাড়া লগ্নিকারী সংস্থা চুক্তিভঙ্গ করতে চাইলে তাদের কোনও অর্থ দিতে হবে না। পক্ষান্তরে, ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে তাদের দিতে হবে শেয়ারের অর্থ। তাঁবুর ভিতর থাকবে শুধুমাত্র সভাপতি ও সচিবের ঘর। অনুমতি ছাড়া তাঁরা সেই গণ্ডির বাইরে বেরতে পারবেন না। পরিমার্জিত চুক্তি অনুযায়ী, ক্লাবের সংবিধানে পরিবর্তন করার অধিকারও থাকবে না কর্তাদের। কর্তাদের সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় রেখে ক্লাব তাঁবুর লিজের ব্যাপারটি নিয়ে শ্রী সিমেন্ট সেনা কর্তৃপক্ষের কথা বলবে। যা কর্তারা মেনে নিতে পারছেন না।
এদিন কর্মসমিতির সভা চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। সমর্থকদের অনুপ্রবেশকারী বলা নিয়ে সবথেকে বেশি হইচই হয়। অধিকাংশ সদস্য জানান, ‘সমর্থকরাই আবেগের মশাল বহন করে। তাঁদের অপমান কোনওভাবেই বরদাস্ত করা সম্ভব নয়।’
এই চুক্তিপত্রে সই না করায় ইস্ট বেঙ্গলের ভবিষ্যৎ ধোঁয়াশায় ভরা। আগামী দিনে লাল-হলুদ জার্সিধারীরা কোন প্রতিযোগিতায় খেলবেন তা’ও অজানা। ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য প্রাক্তন খেলোয়াড়, সদস্য ও সমর্থকদের মতামত চেয়েছেন কর্তারা। চুক্তি বিতর্কে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য হরিমোহন বাঙ্গুরকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরার সৌজন্য বোধটুকুও দেখাননি।