আফগানিস্তানে তালিবান শাসনকে সমর্থন চীনের
কাবুল দখল ছিল সময়ের অপেক্ষা। সেটাও হয়ে গেল নিঃশব্দে। পালিয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি (Ashraf Ghani)। প্রেসিডেন্ট ভবনের দখল নিল তালিবান (Taliban)। ঠিক ২০ বছর পর। কাবুলের (Kabul) পার্লামেন্ট ভবনে সার দিয়ে বসে তালিবান নেতারা। প্রত্যেকের সামনেই টেবিলের উপর রাখা অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। সন্ত্রাসের শাসন ফিরল আফগানিস্তানে। আর ঠিক একইসঙ্গে চরম অনিশ্চয়তার মেঘ ঘনিয়ে এল ভারতের আকাশে। ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসবাদীরা এবার খোলাখুলি মাটি ব্যবহার করবে আফগানিস্তানের। নামেই তালিবান শাসন। আদতে যে সেটা পাকিস্তানের শ্যাডো সরকারই হতে চলেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এবং পাকিস্তানের ছায়া সরকারের প্রকৃত চালিকাশক্তি কে হতে পারে?
সংশয়হীনভাবে চীন (China)। সেই বার্তা স্পষ্ট দিয়েও দিয়েছে এই দুই দেশ। চীনের বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে তালিবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার বার্তা দিয়েছে। বলেছে, ‘তালিবান সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রক্ষা করতে কোনও আপত্তি নেই।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘আফগানিস্তান একটি ছায়া দাসত্ব থেকে মুক্তি পেল।’ অর্থাৎ আমেরিকা ও ভারতের দিকে তাঁর ইঙ্গিত। এই দুটি বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট, তালিবানদের পিছনে প্রকৃত শক্তি কারা। তালিবান নেতাদের পরিবার ও সম্পত্তি সবই পাকিস্তানে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী জনপদেই রমরমিয়ে চলে তালিবান জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির। আর অস্ত্র সাপ্লাইয়ের মধ্যস্থতকারী কে? পাকিস্তান।
অর্থাৎ, ভারতের নাকের ডগায় এখন পাকিস্তান, আফগানিস্তান, চীন। তাই আফগানিস্তানের নয়া যুগ আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৯৯ সালের ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স অপহরণ কাহিনি। কাঠমাণ্ডু থেকে সেই বিমান ওড়ার পর হাইজ্যাকাররা নিয়ে গিয়েছিল কান্দাহারে। মুক্তিপণ দাবি করেছিল তারা। কী সেই শর্ত? মাসুদ আজহার সহ আরও কয়েকজন জঙ্গিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল ভারত। সেই মাসুদ আজহার পাকিস্তানে গিয়ে গঠন করে জয়েশ-ই-মহম্মদ। এরপর লাগাতার ভারতে জঙ্গি হামলা। সুতরাং আফগানিস্তানে পালাবদলের পর নিরাপত্তা নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন আশঙ্কা বলয় তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই সর্বপ্রথম সঙ্কট, কাবুলে আটক ২০০ ভারতীয় দূতাবাসকর্মী। বিমানবন্দরের চূড়ান্ত অচলাবস্থা। কাবুলে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে ১০০ জন দূতাবাস কর্মী এবং ১০০ জন ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিস আটকে রয়েছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সরকার সোমবার দফায় দফায় বৈঠক করেছে বিদেশ মন্ত্রকে। কীভাবে হবে ফেরানোর ব্যবস্থা? একইসঙ্গে আফগানিস্তানের প্রাক্তন সরকার ভারতকে দিয়েছিল একঝাঁক প্রকল্প।
স্কুল, বন্দর, হাসপাতাল, সেতু, রেলপথ, ইরান থেকে আফগানিস্তান যোগাযোগ পরিকাঠামো নির্মাণ, বাঁধ প্রকল্প। এই সমস্ত প্রকল্প মাঝপথে ফেলে রেখে ভারতকে ফিরে আসতে হচ্ছে। এগুলির ভবিষ্যৎ কী? উত্তর অনিশ্চিত। তালিবান সরকার ভারত সহ বিদেশি রাষ্ট্রগুলি সম্পর্কে কী মনোভাব নেবে সেটাও অজানা। আপাতত ভারতের সামনে সবথেকে বড় সঙ্কট, তালিবানের আড়ালে আফগানিস্তান এখন পুরোপুরি পাকিস্তানের দখলে! কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা সোমবার বলেছেন, ‘ভারত সরকারকে চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে। আমরা জানতে চাই এত কিছু ঘটছে, প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন? কোনও বিবৃতি নেই কেন? ভারতের অবস্থান কী?’