রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বাংলায় বাছাই করা জেলায় কেন উজ্জ্বলা গ্যাস বন্টন? বিতর্ক রাজনৈতিক মহলে

September 22, 2021 | 2 min read

ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশজুড়ে উজ্জ্বলা যোজনার দ্বিতীয় পর্বের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গালভরা নাম, উজ্জ্বলা ২.০। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এক কোটি গ্রাহককে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে’। অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলার মানুষও আশায় ছিলেন, তাঁরা কেন্দ্রের ওই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। কিন্তু বাস্তবে বাংলা দেখল, এ সুবিধা সবার জন্য নয়। এরাজ্যের মাত্র তিনটি জেলায় গরিবদের উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাদবাকি জেলাগুলি এই একই সুবিধা কেন পাবে না, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই গ্রাহকের কাছে। অন্ধকারে ডিলাররাও। রাজ্যের রাজনৈতিক মহল অবশ্য দাবি করছে, এখানেও রাজনীতির খেলা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, গত কয়েক বছরে বিজেপি বাংলার যেখানে যেখানে বেড়েছিল, সেই এলাকাগুলিতেই উজ্জ্বলা বিলিয়েছে মোদী সরকার।


গত মাসের গোড়ার দিকে উজ্জ্বলার দ্বিতীয় পর্যায়ের গ্যাস সংযোগের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তার দেড় বছর আগে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। সেবার আট কোটি গরিবকে ওই প্রকল্পের আওতায় আনার দাবি করেছিল কেন্দ্র। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর আগে সমস্ত গ্যাস ডিলারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন সম্ভাব্য গ্রাহকদের তালিকা তৈরি করে। এলাকায় আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা যে যে পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারে, তার হিসেব রাখার কাজ সেরেও রেখেছিল ডিলাররা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সব ডিলারকে উজ্জ্বলা যোজনার সিলিন্ডার বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়নি। এরাজ্যে সেই অনুমতি পেয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও মালদহের ডিলাররা। প্রকল্প চালুর কয়েকদিন পর আবার বাঁকুড়া, মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে বাকি তিন জেলায় উজ্জ্বলার কাজ চলছে। সমীকরণটা পরিষ্কার, বাকি জেলার গরিব মানুষের যতই প্রয়োজন থাকুক না কেন, উজ্জ্বলা ২.০ তাঁদের ভাগ্যে নেই।


কেন এই বৈষম্য? এ রাজ্যের শাসক দলের একাংশ অভিযোগ করছে, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোটবাক্সের সিংহভাগ ছিল বলতে জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গ। তারাই মূলত অক্সিজেন জুগিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় ইনিংসে। কিন্তু জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা বুঝেছিলেন, মেঘ শুধু গর্জেছে। বর্ষায়নি। প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার। তাই গত বিধানসভা ভোটে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল জঙ্গলমহল। রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, বিজেপি বুঝেছে তিন বছর পরের নির্বাচনের জমি প্রস্তুত করতে হলে এখন থেকেই ঝাঁপাতে হবে। আর সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে পজিটিভ ভোটব্যাঙ্ককে। আবার উত্তরবঙ্গে বিজেপি ভালো ফল করলেও মালদহ, ও দুই দিনাজপুর অনেকটাই হতাশ করেছে বিজেপিকে। ফলে এখানেও এক স্ট্র্যাটেজি। অর্থাৎ দিনের শেষে লক্ষ্য সেই পাহাড় ও জঙ্গলমহল। তাই উজ্জ্বলার দরজা খুলেছে ওই দু’টি অঞ্চলেই। তবে তেল সংস্থারা দাবি করছেন, শুধুমাত্র কয়েকটি জেলাকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য যুক্তি আছে। তাঁদের দাবি, যে জেলাগুলিতে ৯০ শতাংশের কম পরিবারে গ্যাস সংযোগ আছে, সেখানেই উজ্জ্বলার সুবিধা দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই হিসেব মতোই এরাজ্যের ছ’টি জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই ছ’টি জেলার মধ্যে গ্যাস সংযোগ দিয়েও পশ্চিমবঙ্গ উজ্জ্বলার মানচিত্রে উজ্জ্বল, এমনটাই দাবি করেছেন গ্যাস সংস্থার কর্তারা। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ের উজ্জ্বলা স্কিমে প্রায় ১২ লক্ষ ১৯ হাজার গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছে ২ লক্ষ ৩৯ হাজার সংযোগ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বিহারে যেখানে মোট ৩৮টি জেলাকে উজ্জ্বলা বিতরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে বাংলার মাত্র দু’টি কেন? ইন্ডিয়ান অয়েলের ইন্ডেন বিভাগের পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ দে অবশ্য জানিয়েছেন,শুধুমাত্র তাঁদের সংস্থা এরাজ্যে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার সংযোগ দিয়েছে, যা সারা দেশে সর্বোচ্চ।     

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Ujjwala Gas

আরো দেখুন