রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

উৎসবের কলকাতা কানায় কানায় পূর্ণ পঞ্চমীতেই

October 11, 2021 | 2 min read

রবিবার দুপুর সাড়ে তিনটে। সবে বেলেঘাটা মোড় পেরিয়েছে টালিগঞ্জগামী এসি বাস। হঠাৎই ঝাপসা হতে শুরু করল জানলার কাচ। বাস যখন সায়েন্স সিটি পেরচ্ছে, তখন তুমুল বৃষ্টিতে সাদা হয়ে গিয়েছে চারদিক। অথচ শরতের আকাশ এতটুকু বুঝতে দেয়নি, এত ঝেঁপে বৃষ্টি নামাবে পঞ্চমীর দুপুর। ভিড়ে ঠাসা বাসে এসি ঠিকভাবে কাজ না করায়, ততক্ষণে কন্ডাক্টরের মুণ্ডপাত করছেন যাত্রীরা। তারই মধ্যে বছর ২৫-এর এক যুবক বেশ উসখুশ করছিলেন। তাঁর বন্ধুরা ততক্ষণে গড়িয়াহাটে পৌঁছে গিয়েছেন। শুধু তিনিই ‘লেট’। দেরি হওয়ার কারণ বোঝাতে বাস থেকেই মোবাইলে বৃষ্টির পরপর কয়েকটা ছবি তুললেন। পাঠিয়ে দিলেন বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। লেকটাউন এলাকা পেরিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনো কতটা ঝকমারি, তা যদি বন্ধুরা জানত! গোটা কলকাতাই যেন রাতদিন ধরে এগিয়ে চলেছে শ্রীভূমির বুর্জ খলিফার দিকে।

হাওয়া অফিস বলে দিয়েছে, অষ্টমী থেকে বৃষ্টি হবে। অবশ্য সেসব নির্ঘণ্ট মানার চেষ্টাই করেনি প্রকৃতি। পঞ্চমী থেকেই শহরে শুরু হয়েছে বর্ষার শেষ লগ্নের লীলা। কিন্তু সেসব নিয়ে ভাবার সময় নেই মানুষের। দুপুর থেকেই তাঁরা রাস্তায়। ভিড়, গতিহীন গাড়ির লাইন এড়িয়ে নির্বিঘ্নে ঠাকুর দেখতে চান সকলে। কিন্তু চাইলেই আর হচ্ছে কই? একডালিয়া এভারগ্রিনের সামনের জনস্রোত বুঝিয়ে দিচ্ছিল, উৎসবের কলকাতা কানায় কানায় পূর্ণ পঞ্চমীতেই। ভিড় সামলাতে যতটা মরিয়া পুলিস, সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরাতেও ততটাই তৎপর তারা। গড়িয়াহাট মোড়ে বারবার প্রচার করা হচ্ছিল মাস্ক পরার জন্য। শিশুদের নিয়ে যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল একডালিয়া এভারগ্রিনের কিয়স্ক থেকে। কিন্তু তা আর ক’জনই বা শুনলেন! থুতনিতে মাস্ক টাঙিয়ে দেদার ঘুরে বেড়ালেন হাজার হাজার মানুষ। সেই তালিকায় এগিয়ে মহিলারা। দক্ষিণের ভিড় ছড়িয়ে পড়ল সিংহীপার্ক, ত্রিধারা সম্মেলনী-দেশপ্রিয় পার্কে। কেউ এগলেন চেতলা অগ্রণীর দিকে। কারও গন্তব্য সুরুচি সঙ্ঘ। তবে দুপুর পর্যন্ত সেখানকার পুজোর উদ্বোধন না হওয়ায় কাছাকাছি ঘেঁষতে দেয়নি পুলিস। আইসক্রিম আর ফুচকা দিয়েই হতাশা কাটালেন অনেকে।

উৎসবের শেষ লগ্নে পাছে বৃষ্টি আরও নাকাল করে, তাই পঞ্চমীর সন্ধ্যা হেলায় হারাতে চাননি শহরবাসী। সন্ধ্যার আগেই আলো জ্বলে উঠেছিল মণ্ডপে, রাস্তায়। কলেজ স্কোয়ার ফিরল তার চেনা চেহারায়। জনস্রোত মিশে গেল হাতিবাগান সর্বজনীন, আহিরীটোলা, কুমোরটুলি, টালা বারোয়ারি বা টালা প্রত্যয়ের মতো ডাকসাইটের পুজোয়। এবার পুজোয় শহরতলি থেকে আসা গাড়ি সেভাবে ভিড় করেনি রাস্তায়। কিন্তু তাতেও গাড়ির সংখ্যা এতটুকু কমেনি। অধিকাংশ জায়গায় সিগনালে অনেকটা সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে মানুষকে। কিন্তু তাতে কী। এই ধৈর্যটুকুর জন্যই তো এত অপেক্ষা। এত আয়োজন…মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে মহাপঞ্চমীতে জেলায় জেলায় একাধিক পুজোর উদ্বোধন হয়েছে ভার্চুয়ালি। তবে মানুষ কিন্তু ঘরবন্দি থাকেননি। বেরিয়ে পড়েছেন তাঁরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পার্বণ জমেছে ঘরোয়া আড্ডায়। আজ মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধন। কিন্তু তার আগেই রবিবার উন্মাদনার জয়ঢাক বাজিয়ে দিল লাখো মানুষের ভিড়। যাত্রা হল শুরু উৎসবের।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Pandal Hopping, #Panchami, #Crowds

আরো দেখুন