শ্যাম দিচ্ছেন প্রতিমা, জোনাস পাঠাচ্ছেন ফুল, সম্প্রীতির পুজো ব্রিটেনের মাটিতে
প্রথম থেকেই পুজো নিয়ে বাড়তি উদ্যোগী ছিলেন রাজীব কুণ্ডু। কাজকর্ম ভুলে পুজোকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করে তোলাই তাঁর ধ্যানজ্ঞান ছিল। রুনু কাকিমাই বা কম কী ছিলেন, বয়স হলেও পুজোর চারদিন মণ্ডপেই মেতে থাকতেন। রাজীব কুণ্ডু বা রুনু কর পুণের আনন্দধারা সংস্থার পুজোর দুই প্রাণভোমরাই গত হয়েছেন। স্বজন হারানোর দুঃখ নিয়ে তাই এবার তাঁদের থিম স্বজন। কিন্তু এই স্বজনকে বাস্তবে রূপ দিতে বহু কঠিন পথ পার করতে হল পুজোর উদ্যোক্তাদের। করোনার থাবা পড়েছে পুনের শিল্পক্ষেত্রেও। বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। অনেকের বেতন অর্ধেক হয়েছে। এই অবস্থায় পুজো হবে কী! অবশেষে এগিয়ে এলেন ব্রিটেনের শিল্পপতি শ্যাম সুমন। প্রতিমার খরচের দায়িত্ব তুলে নিলেন তিনি। একইভাবে অবাঙালি জয়সন জোস নিলেন পুজোর ফুলের দায়িত্ব। বাঙালিদের হাতে হাত মিলিয়ে পুজো অংশ নিয়েছেন মারাঠিরাও। এভাবেই সম্প্রীতির মেলবন্ধনে ঘটা করেই পুজো হচ্ছে আনন্দধারায়।
গতবছর এই পুজোর ঠাকুর গিয়েছিল দুর্গাপুর থেকে। কিন্তু এবার তার প্রয়োজনীয়তা নেই। বাঙালি অবাঙালি মিলেমিশে দশভুজার আরাধনায় নেমে পড়ায় বাংলা থেকেই মৃৎশিল্পী গিয়ে পুনেতে ঠাকুর গড়ছেন। একটি দুটি নয় ১৭টি ঠাকুরের বরাত পেয়েছেন তিনি। করোনা বিধি কিছুটা শিথিল হতেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ শারদোৎসবে মাততে প্রস্তুত দেশের পশ্চিমপাড়ের প্রসিদ্ধ এলাকা। পুনে ইন্ড্র্রাস্টিয়াল এরিয়া দেশের অন্যতম সেরা শিল্পক্ষেত্র। অটোমোবাইল থেকে আইটি নানা ক্ষেত্রেও বহু দেশি বিদেশি সংস্থার বিনিয়োগ রয়েছে। এই এলাকাতেও বাঙালিদের উপস্থিতি উজ্জ্বল। কিন্তু করোনার জেরে অর্থনীতির আঘাতের প্রভাব পড়েছে এই এলাকাতেও। বহু সংস্থা কর্মীদের বেতন কমিয়েছে। তবে, মারণ ভাইরাসের প্রকোপ কমতেই পুজোর বিধিনিষেধ কিছুটা কমেছে। সুযোগ থাকলেও শুধুমাত্র অর্থের অভাবে পুজো হবে না, এটা নিয়ে মনখারাপ ছিল পুণের বাঙালিদের। এই অবস্থায় মায়ের পুজোয় পাশে দাঁড়ালেন বাঙালি অবাঙালি সকলেই। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মেলবন্ধনে মা দুর্গা কখনও হয়ে উঠছেন দেবী উমা, কখনও আবার মারাঠিদের মাতাজি।
দুর্গাপুরের কৌশিক সাহা দীর্ঘদিন বিদেশে উচ্চ বেতনে কাজ করার দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে পুনেতে কর্মরত রয়েছেন। তাঁর উদ্যোগেই পুজো শুরু হয়েছে আনন্দধারায়। গতবছর কঠোর করোনা বিধি থাকা সত্ত্বেও দুর্গাপুর থেকে প্রতিমা নিয়ে গিয়ে পুজোর আয়োজন করেছিলেন। এবার কিন্তু পুজোতে অনেকটাই ছাড় মিলেছে। তাই ঠাকুরের চাহিদা তুঙ্গে উঠতেই পুনেতে হাজির কলকাতা শহরতলির মৃৎশিল্পী তাপস পাল। এই অবস্থায় মারাঠি থেকে খ্রিস্টান সকলে বাঙালিদের সঙ্গে মিলেমিশে পুনের দুর্গোৎসবে এক অপূর্ব সম্প্রীতির সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন।
কৌশিকবাবু বলেন, স্বজন হারানোর দুঃখ থেকেই আমাদের থিম ভাবনা স্বজন। আমাদের পুরো পুজোর সামগ্রীই বাংলা থেকে যাচ্ছে। আমরা চাই ষোলাআনা বাঙালিয়ানা বজায় থাক। তিনি বলেন, মারাঠিরাও ভীষণভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
একইভাবে পুজোয় মেতে উঠছে পুনের বিশ্বভারতী পুজোমণ্ডপও। পিছিয়ে নেই বঙ্গভারতী, আগমনি সংস্থা। এককথায় পুজোর সময়ে এক টুকরো বাংলার দেখা মিলবে মহারাষ্ট্রের পুনেতে।