দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মুম্বই থেকে ডাক দিলেন মমতা
আরব সাগরের তিরে বসে দেশের গণতন্ত্র রক্ষার ডাক দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠকের আগে মুম্বইয়ের নাগরিক সমাজের মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়, ‘মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে?’ জবাবে মমতা বলেন, ‘চরম দক্ষিণপন্থীদের হাতে আক্রান্ত দেশ। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, এটা বড় বিষয় নয়। পরিস্থিতি ঠিক করবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম। গণতন্ত্র রক্ষা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপিকে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে।’
মুম্বইয়ের নাগরিক সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়ের শুরু থেকেই সভার সুর বেঁধে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘দেশ ও সমাজকে ভাগ করতে দেওয়া যাবে না। আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হবে। এই লড়াইয়ে নাগরিক সমাজ পাশে থাকলে, বিজেপিকে বোল্ড আউট করা সম্ভব।’
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিজেপি বাংলার ঐক্যও বারবার নষ্ট করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর সরকারের কাছে মানবিকতাই গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলায় তাঁর সরকারের আমলে কী কী প্রকল্প চালু হয়েছে, তার বিশদও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঘটনাচক্রে বুধবারই বোম্বে হাইকোর্ট ভীমা কোরেগাঁও মামলায় জামিন পান সমাজকর্মী-আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ। রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইনে সুধা ভরদ্বাজ সহ একাধিক বিশিষ্ট সমাজকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা চলছে। নাগরিক সমাজের এই সভায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করা হয়। এই প্রসঙ্গে বিজেপি-র স্বৈরাচারের কথা তুলে ধরে মমতা বলেন, ‘একসময় টাডা আইনের বিরোধিতায় মন্ত্রিত্ব ছেড়ে ছিলাম। এখন ইউএপিএ-র অপপ্রয়োগ হচ্ছে।’ তিনি ছত্রধর মহাতোর কথাও টেনে আনেন। বলেন, ছত্রধর ছাড়া পাওয়ার পর, ফের তাঁকে অন্য মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। মমতার প্রতিশ্রুতি, বিজেপি সরকার না-থাকলে, দেশে এই দানবীয় আইনও থাকবে না।
বিরোধীদের ভয় দেখাতে বিজেপি যে সরকারি এজেন্সিগুলিকে কাজে লাগাচ্ছে, সে অভিযোগ আগেও করেছেন। এদিনও আবারও বললেন, ‘এজেন্সিগুলিকে দিয়ে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করছে বিজেপি।’ ভবিষ্যতের কর্মপন্থা ঠিক করতে সমাজের বিশিষ্টদের নিয়ে প্রতিটি রাজ্যে উপদেষ্টা কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব দেন। মমতা বলেন, ‘আমরা এই উপদেষ্টা কমিটির পরামর্শ নেব।’
বিজেপি বিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য, স্বাভাবিক কারণেই কংগ্রেস চলে আসে আলোচনায়। মমতা কংগ্রেস নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু না-বললেও আঞ্চলিক দলগুলিকে একজোট করার ওপর যে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা স্পষ্ট করে দেন। তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, ‘বিজেপিকে আট বছর ধরে দেখছি। কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা করছে না। কাউকে তো বেড়ালের গলায় ঘণ্টি বাঁধতে হবে।’ নাগরিক সমাজের সঙ্গে এই সভার আয়োজন করেছিলেন জাভেদ আখতার ও সুধীন্দ্র কুলকার্নি।