ওমিক্রন নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন অ্যান্টিবডির হদিশ পেলেন মার্কিন বিজ্ঞানী
ওমিক্রনের ঠেলায় বিশ্বজুড়ে যখন করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তখন আশার খবর শোনালেন একদল মার্কিন বিজ্ঞানী। গবেষণায় তাঁরা এমন কিছু অ্যান্টিবডির সন্ধান পেয়েছেন, যা শুধু ওমিক্রন নয়, করোনার আগের স্ট্রেইনগুলিকেও নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম। কেননা এই অ্যান্টিবডি মূল ভাইরাসের অপরিবর্তিত অংশে আঘাত হানছে। গবেষকদলের ওই রিপোর্ট সায়েন্স জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশ পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর ফলে ভ্যাকসিন তৈরি এবং অ্যান্টিবডি চিকিৎসা গতি পাবে।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনে সর্বোচ্চ ৩৭ বার মিউটেশন হয়েছে। আর সেটাই তাকে ছোঁয়াচেতম গড়ে তুলেছে। ভ্যাকসিন নেওয়া এবং করোনাজয়ীদেরও সংক্রামিত করছে। কীভাবে অ্যান্টিবডিকে ঠকিয়ে শরীরে ভাইরাস বাসা বাঁধছে, তা জানতে গবেষণা শুরু করেন আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন স্কুল অব মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা। এজন্য তাঁরা একটি নিষ্ক্রিয় তথা সিউডোভাইরাস তৈরি করেন, যা করোনা ভাইরাসের মতো স্পাইক প্রোটিন উৎপাদন করতে সক্ষম। এছাড়া ওমিক্রন তথা অন্যান্য স্ট্রেইনে থাকা স্পাইক প্রোটিনও তার মধ্যে রয়েছে। স্পাইক প্রোটিনের ভিন্ন ভিন্ন রূপ কীভাবে মানব কোষের প্রোটিনে (এসিই-২ রিসেপটর) আটকে যাচ্ছে, অথবা তার মাধ্যমে ভাইরাস কীভাবে কোষের ভিতরে প্রবেশ করছে, তার রহস্য উন্মোচনই ছিল গবেষকদের মূল লক্ষ্য। সেখানে জানা যায়, অন্যান্য স্ট্রেইনের থেকে কোষে আঁকশির মতো আটকে থাকার ক্ষমতা ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনের প্রায় আড়াইগুণ বেশি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর ফলে ওমিক্রন অতিদ্রুত মানুষ থেকে অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী বা স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে।
এরপরেই বিজ্ঞানীরা খুঁজতে শুরু করেন কীভাবে অ্যান্টিবডিকে বাইপাস করে শরীরে প্রবেশ করছে? সেজন্য তাঁরা আগের স্ট্রেইনে আক্রান্ত তথা করোনাজয়ী, ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তি এবং করোনা জয়ের পর টিকা নেওয়া ব্যক্তির থেকে অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করেন। সেখানে গবেষকরা লক্ষ্য করেন, করোনাজয়ী এবং ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের শরীরে অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা কমেছে। তবে, করোনাজয়ের পর ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তির অ্যান্টিবডির ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম ধাক্কা খেয়েছে। অর্থাৎ, সংক্রামিত হওয়ার পর টিকা বেশি কার্যকর। আর তাই কোভিড-১৯ রোধে তৃতীয় তথা বুস্টার ডোজ জরুরি বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের অন্যতম ডেভিড ভেসলার।
তবে গবেষকরা এই সমস্ত ব্যক্তির মধ্যে চার ধরনের অ্যান্টিবডির খোঁজ পেয়েছেন, যেগুলি ওমিক্রনকে কাবু করতে সক্ষম। তারা সার্স-কোভ-২ তথা সমশ্রেণিভুক্ত ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের নির্দিষ্ট চার জায়গার মধ্যে একটিতে আঘাত করে। মিউটেট হলেও ভাইরাসের এই চারটি অংশ অপরিবর্তিতই থাকে। ভাইরাসের এই এলাকাগুলি ‘সংরক্ষিত’। এখানে মিউটেশন হলে স্পাইক প্রোটিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন স্কুল অব মেডিসিনের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ভেসলার বলেন, ‘অ্যান্টিবডিগুলি স্পাইক প্রোটিনের ওই সংরক্ষিত এলাকায় আঘাত করে। তাই সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ধারাবাহিক বিবর্তনকে রুখে দেওয়া সম্ভব।’