কলকাতার ট্রাম ডিপোগুলিতে শিল্প হাব গড়ার সিদ্ধান্ত রাজ্যের
বাংলার কুটিরশিল্পের সামনে বৃহত্তর বাজারের দরজা খুলে দিতে এবার মহানগরীতেই শিল্প হাব গড়ার সিদ্ধান্ত নিল সরকার। আর সেই হাব গড়ে তোলা হবে ট্রাম ডিপোগুলিতে। আপাতত ঠিক হয়েছে কালীঘাট, রাজাবাজার ও বেলগাছিয়ায় যথাক্রমে রসগোল্লা, বস্ত্র ও সোনার হাব হবে। বাকি ডিপোগুলিতে কী হবে, তার সিদ্ধান্ত আগামী দিনে নেবে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পদপ্তর।
ওড়িশার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শেষে জিআই তকমা পেয়েছে বাংলার রসগোল্লা। তা মনে রেখেই প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর রসগোল্লা দিবস পালিত হয় বাংলায়। কিন্তু এখানেই উদযাপনের ইতি টানতে চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রাজ্যের মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারকদের অন্যতম সংগঠন মিষ্টি উদ্যোগের সভাপতি ধীমান দাশ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, রসগোল্লার বিপণনকে আরও ঢেলে সাজতে চায় সরকার। সেই মতো হাব গড়ার প্রস্তাব দেন তিনি। জমি দেওয়ার ব্যবস্থাও সরকার করবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।’ ছোট শিল্পদপ্তর জানিয়েছে, কালীঘাট ট্রাম ডিপোর রসগোল্লা হাবে যেমন বিভিন্ন ধরনের রসগোল্লা বিক্রি হবে, তেমনই বাংলার নানা প্রান্তের নামজাদা মিষ্টিওয়ালাদের পণ্যও থাকবে। ফলে শহরের জনপ্রিয় রসগোল্লা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির পাশাপাশি ঠাঁই পাবে কৃষ্ণনগরের সরভাজা, সরপুরিয়া বা বর্ধমানের মিহিদানা, সীতাভোগ। মিষ্টির আয়ু যাতে বাড়ানো যায়, তাই প্যাকেজিংয়ের অত্যাধুনিক মেশিনও বসানো হবে।
বাংলার তাঁতশিল্পীদের জন্যই মূলত বস্ত্র হাব তৈরি হবে রাজাবাজারে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শাড়ি বা তাঁতবস্ত্রের বাজার পেতে ধনেখালি, শান্তিপুরের তাঁতিরা বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন। রাজ্য সরকার প্রতি বছর কলকাতা সহ বাংলার নানা প্রান্তে যে ‘তাঁতের হাট’-এর আয়োজন করে, সেখানেই ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় শিল্পীদের। এর বাইরেও যাতে তাঁরা সারা বছর ক্রেতা পান, সেই লক্ষ্যে হচ্ছে বস্ত্র হাব। এখানে সরাসরি তাঁতবস্ত্র বিক্রি করবেন তাঁতিরা। আবার বেলগাছিয়ায় যে স্বর্ণ হাব গড়ে উঠবে, সেখান থেকে খুচরো বিক্রিবাটার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হবে রপ্তানিতে। সিঁথিতে বাংলার স্বর্ণশিল্পীদের একটা বড় অংশ কাজ করেন। তাঁদের কাজের নিশ্চয়তার পাশাপাশি ছোট স্বর্ণকাররা যাতে ক্রেতা পেতে পারেন, হাবের লক্ষ্য সেটাই।
সরকারি কর্তারা জানাচ্ছেন, শহরে ট্রামের সংখ্যা ক্রমশ কমে এলেও ইলেকট্রিক বাস বাড়ছে। সেগুলি রাখার জায়গা চাই। তাই ট্রাম বা বাসের জন্য জায়গা রেখে, ২৫ ফুট উপর তৈরি হবে হাবের পরিকাঠামো। বাসের গ্যারেজ ও শিল্প—দু’টি উদ্দেশ্যই সফল হবে।