দু’টি টিকাই যথেষ্ট, বিদেশিদের জন্য কোভিড পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা তুলে নিল ব্রিটেন সরকার
কোভিডকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। এই সত্যটাকেই প্রায় মেনে নিল ব্রিটেন। ফলে সে দেশে পর্যটক বা বিদেশিদের প্রবেশের ক্ষেত্রে যে নিয়ম স্থির করা হয়েছিল তা বাতিল করে দিল ব্রিটেন সরকার। প্রশাসন জানিয়েছে, দু’টি টিকা নেওয়া এমন পর্যটক বা যাত্রীদের ব্রিটেন ভ্রমণের আগে বাধ্যতামূলক কোভিড পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন নেই। অতিমারি পর্যায়ে বিশ্বের মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিল ব্রিটেন।
এত দিন পর্যন্ত যে নিয়ম ছিল ব্রিটেনে ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টা আগে কোভিডের আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ দেখাতে হত দু’টি টিকা নেওয়া প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রীদের। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনে পৌঁছনোর দু’দিনের মধ্যে পকেটের টাকা খরচ করে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করাতে হত। এবং রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত নিভৃতবাসে থাকতে হত। কিন্তু ৭ জানুয়ারি থেকে সেই নিয়ম তুলে নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। আর তাদের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে পর্যটন সংস্থা এবং বিমান সংস্থাগুলি।
গত ৭ জানুয়ারি নতুন এই নিয়মের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি জানান, পর্যটন এবং বিমান সংস্থাগুলি থেকে আবেদন আসছিল যে, বিদেশিদের ব্রিটেনে ঢোকার জন্য এবং ঢোকার পরে যে কোভিডবিধি পালনের কড়াকড়ি তার জেরে পর্যটন এবং বিমান পরিবহণ শিল্পের উপর প্রভাব পড়ছে। অনেকে এই নিয়মের কারণে ব্রিটেনে আটকে পড়ার ভয় পাচ্ছেন। ফলে তারও একটা প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পে। তাই সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন জনসন।
জনসন বলেন, “দেশে যখন ওমিক্রন প্রথম ধরা পড়েছিল, আমরা বিদেশিদের ক্ষেত্রে কড়া কোভিডবিধি চালু করেছিলাম। কিন্তু এখন ওমিক্রনই দেশে সংক্রমণের চালিকাশক্তির ভূমিকায়। ফলে এত কড়াকড়ি বিধিনিষেধও খুব একটা কাজে আসছে না। বরং এর প্রভাব পড়ছে দেশের পর্যটন, বিমাণ পরিবহণ-সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে। তাই এখন থেকে বিদেশিদের জন্য সেই কড়া বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, ব্রিটেনে পৌঁছনোর দু’দিনের মধ্যে যে পিসিআর পরীক্ষা করাতে হত বিদেশিদের, এখন থেকে তা খুব কম খরচেই করতে পারবেন তাঁরা। নেগেটিভ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত নিভৃতবাসে থাকার নিয়মও তুলে নেওয়া হচ্ছে।
বিমান সংস্থাগুলি সম্প্রতি জানিয়েছিল যে, যাত্রীদের কোভিড পরীক্ষা করে আখেরে কোনও লাভ হচ্ছে না। বরং যাত্রীদের বাধ্যতামূলক পরীক্ষার নিয়মে বিমান পরিবহণ শিল্পের ক্ষতিই হচ্ছে। এয়ারলাইন্স ইউকে-র চিফ এগজিকিউটিভ টিম অ্যাল্ডারস্লেড বলেন, “এটা খুব ভাল একটা পদক্ষেপ। বিশেষ করে এই সঙ্কটময় মুহূর্তে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্রিটেন ভ্রমণে পর্যটক সংখ্যা বাড়বে। কারণ এখন থেকে দু’টি টিকা নেওয়া যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোভিড পরীক্ষার বিষয়টি আর রইল না। ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
ইজিজেট পিএলসি-র শীর্ষ কর্তা জোহান লান্ডগ্রেন আবার বলেছেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিদেশিদের ব্রিটেনে আসা আরও সহজ হল। যাত্রীরা ভরসা পাবেন ব্রিটেনে আসতে। ব্রিটেনে আসার পর কোভিড পরীক্ষার বিষয়টিও তুলে নেওয়া উচিত সরকারের।”
মাসখানেক আগে যখন এই নিয়ম চালু করেছিল ব্রিটেন তখন সেখানে দিনে ৪০-৫০ হাজার সংক্রমণ হচ্ছিল। কারণ তখনও ডেল্টার সংক্রমণ চলছিল ব্রিটেনে। কিন্তু এখন ওমিক্রনের কারণে সেই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ব্রিটেনে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষের।