‘ডবল ইঞ্জিন’ ত্রিপুরায় বিদ্যুৎহীন হাসপাতালে চিকিৎসা চলল মোমবাতি জ্বালিয়ে
দীর্ঘক্ষণ একটানা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে ডুবে রইল ত্রিপুরার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। বিদ্যুৎ সংযোগের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা এই হাসপাতালে নেই। আশ্চর্য করে দেওয়ার মতো তথ্য হল, রাজ্যের প্রধান রেফারেল এই হাসপাতালে জেনারেটরের ন্যূনতম সুবিধাটুকুও রাখেনি স্বাস্থ্যদপ্তর। ফলে মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ করে অন্ধকারে অচল হয়ে গেল জিবি হাসপাতাল।
উন্নয়নের দোহাই দিয়ে বারবার ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’-এর কথা বলে থাকে বিজেপি। কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই সরকার থাকলে জনকল্যাণের কাজ নাকি ভালো হয় বলে যুক্তি দিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পারিষদবর্গ। কিন্তু শিক্ষা থেকে কৃষি, মৎস্য থেকে স্বাস্থ্য, সব বিভাগেই ডাহা ফেল ত্রিপুরার বিপ্লব দেবের সরকার। একটানা নৈরাজ্যের শিকার হতে থাকা ত্রিপুরার আম আদমির কাছে ডবল ইঞ্জিনের উপমা ক্রমশ হাস্যকর ঠেকছে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট।
মঙ্গলবারে দুপুরে হাসপাতালের ছবিটা মর্মান্তিক। আইসিওতে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন রোগীরা। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীরা হাতে মোমবাতি, মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটের আলো জ্বালিয়ে কোনওরকমে ঠেকনা দেওয়া চিকিৎসা চালাচ্ছেন। কোথাও আবার অন্ধকার ওয়ার্ড থেকে রোগীর পরিজনদের চিৎকার ভেসে আসছে। স্যালাইন শেষ হয়ে গিয়েছে কোনও রোগীর। ছুঁচ ফোটানোর জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। লাল হয়ে উঠছে বিছানা। মোমবাতি হাতে ছুটোছুটি করে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টায় স্বাস্থ্যকর্মীরা। রোগীদের কাতর চিৎকার শুনে চিকিৎসকরা নিজেরাই মোমবাতি হাতে ছুটে যাচ্ছেন। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের মন্তব্য ‘সব মিলিয়ে পরিস্থিতি নরকের থেকেও খারাপ।’
প্রায় ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় কেটে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ আসে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ট্রান্সফর্মারে গোলযোগ দেখা দিয়েছিল। সেই বিকল ট্রান্সফর্মার সারাই করতে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় লাগে বিদ্যুৎ নিগমের কর্মীদের। হাসপাতালের কর্মীদের অভিযোগ, ‘এখানে বিভ্রাট দেখা দিলে প্রতিবার একই অবস্থা হয়। ব্যাটারি কিংবা জেনারেটরের মতো বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই।’ জিবি হাসপাতালের এমএস ইনচার্জ ডাঃ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা সংযোগ ছিল না। ফলে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে খুব অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের।’ এক রোগীর আত্মীয় শুক্লা দেব বলেন, ‘আমার আত্মীয়ের অবস্থা খুব খারাপ। জ্ঞান ফিরছে না। এদিকে ডাক্তারবাবুরা বলছেন কারেন্ট না এলে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের একাংশের বক্তব্য, নেতামন্ত্রীদের বাড়িতে দু’টি করে ভিআইপি কানেকশন থাকে। তাঁদের জন্য বরাদ্দ আধুনিক জেনারেটর। আর এ রাজ্যের গরিব মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বিরোধীরা একযোগে এই অব্যবস্থার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব থেকে শুরু করে বিদ্যুৎমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা ঢাক
ঢোল পিটিয়ে বলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ বাইরে বিক্রি হয়। কিন্তু বাস্তব তো বলছে অন্য কথা। প্রধান হাসপাতালেই বিকল্প বিদ্যুৎ জোগানের ব্যবস্থা নেই।
এই বিভ্রাটের খবর এদিন সব মহলকে নাড়িয়ে দেয়। কড়া প্রতিক্রিয়া জানান বিরোধীরা। প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মন বলেন, ‘রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। আম জনতার পরিষেবা প্রায় নেই’। রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের আহ্বায়ক সুবল ভৌমিকের বক্তব্য, ‘হাসপাতালগুলোর পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামোই নেই। আর ভূ-ভারতে একমাত্র ত্রিপুরাতেই অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা বন্ধ। রাজ্যের মানুষ আজকাল জিবি হাসপাতালকে মৃত্যুপুরী হিসেবেই চেনেন। তাই সবাই বাধ্য হয়ে ট্রেনে করে শিলচর, গুয়াহাটিতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।’