বাংলায় করোনা সংক্রমণ কমতেই, স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা পরিষেবা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যাগে বাংলার করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সংক্রমণের প্রকোপ কমায় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে বাংলার চিকিৎসা পরিষেবা। চাহিদা কমতেই সব হাসপাতালেই কোভিড আক্রান্তদের জন্য বরাদ্দ করা শয্যার সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য রোগের চিকিৎসা ফের পুরোদমে শুরু হচ্ছে বাংলায়। ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীরা সংক্রমিত হওয়ায়, বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা এমনকি সার্জারির মতো চিকিৎসা পরিষেবাও ব্যবহত হয়েছিল। অতিমারি পেরিয়ে ফের তা শুরু হয়েছে। অনেক রোগী এবং তাদের আত্মীয়েরা সংক্রমণের ভয়ে পূর্ব নির্ধারিত অপারেশেনের দিনক্ষণ পিছিয়ে দিয়েছিলেন, বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, তারা ফের শল্য চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন।
পিয়ারলেস হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জেন সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “করোনা সংক্রমণ যখন বাড়ছিল, তখন রোগীরা হাঁটু, হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি করতে বিলম্ব করছিলেন। সরকারি মতে সংক্রমণ কমা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করছিলেন। এখন আমি রোগীদের এবং তাদের আত্মীয়দের থেকে ফের ফোন পেতে শুরু করেছি। তারা জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারীর শুরুতে অপারেশন করানোর জন্য সময় চাইছেন।”
পিয়ারলেসের চিফ এক্সিকিউটিভ সুদীপ্তা মৈত্রের কথায়, তাদের প্রতিষ্ঠানে কোভিড বেডের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা শুরু হয়েছে। তিনি জানান অন্য রোগের চিকিৎসা করাতে এসেও রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছিলেন, সেই সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। অন্য রোগের চিকিৎসা করাতে এসে করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের পরিবারের সম্মতিক্রমে অন্য রোগের অপারেশনও সেরে ফেলা হচ্ছে। সোমবার কোভিড বেডের সংখ্যা ১৪০ থেকে কমিয়ে ৯৫ করা হয়েছে।
আর এন টেগর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সে বিগত বছরের ডিসেম্বরে ৪৫টি শয্যা করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ করে রাখা হয়েছিল। চলতি জানুয়ারিতে তার সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫০ করা হয়। সোমবার তা কমিয়ে ফের ১১০ নামিয়ে আনা হয়েছে।
আর এন টেগর হাসপাতালের রিজিওনাল ডিরেক্টর আর ভেঙ্কাটেশ জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত নন কোভিড বেডের চাহিদা বাড়ছে। পূর্ব নির্ধারিত অপারেশন করানোর জন্য রোগীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রায় ৩০ শতাংশ রোগী ডেট চাইছেন। তাদেরা কোভিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেডের সংখ্যা ৪০টি কমানো হয়েছে।
বেলভিউ ক্লিনিক বিগত সপ্তাহে দু’বার তাদের কোভিড বেডের সংখ্যা কমিয়েছে, ১০২ থেকে হ্রাস করে প্রথমে ৮০ এবং তারপরে ফের একবার শয্যা কমিয়ে ৪৮ টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। বেলভিউ ক্লিনিকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার প্রদীপ টন্ডন জানিয়েছেন, “করোনা রোগীদের জন্য আমরা ৩৪ টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার এবং ১৪টি জেনারেল বেড রেখেছি।” তিনি আরও জানান, “বেলভিউ প্রতিদিন ৩০ টি করে সার্জারি করত। তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে সংক্রমণের কারণে তা ৫-এ নেমে এসেছিল। গত মঙ্গলবার বেলভিউতে ১৮ টি সার্জারি করা হয়েছে।”
আমরি হসপিটাল গ্ৰুপের সিইও রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, “আমরি গ্ৰুপ তাদের কলকাতার তিনটি হাসপাতালে কোভিড বেডের সংখ্যা ৩০০ থেকে কমিয়ে ২৫০-তে নামিয়ে এনেছে। আমরা ধারাবাহিকতাভাবে বেডের সংখ্যা কমাচ্ছি। কিন্তু এখনও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেডের চাহিদা থাকায় সেই সংখ্যা কমানো হয়নি।”
রাজ্যের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালই তাদের কোভিড বেডের সংখ্যা কমাচ্ছে। যা প্রমান করে দিচ্ছি আসতে আসতে স্তিমিত হচ্ছে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ। আর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতেই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে।