দেশ বিভাগে ফিরে যান

বিজেপি সরকার নির্লজ্জভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে, পেগাসাস ইস্যুতে আক্রমণ তৃণমূলের

January 29, 2022 | 3 min read

পেগাসাস কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই একযোগে লোকসভা ও রাজ্যসভায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল তৃণমূল। একাধিকবার বিক্ষোভও দেখায় জোড়াফুল শিবির। পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তও শুরু করে। আর এবার মোদি সরকারের পেগাসাস কেনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই ফের সুর চড়াল তৃণমূল। শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইমস দাবি করে, ২০১৭-তে পেগাসাস কিনেছিল মোদি সরকার। এর পরেই পেগাসাস ইস্যুতে কেন্দ্রকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করল তৃণমূল।


দলের তরফে টুইটে লেখা হয়েছে, ‘স্টেট স্পনসর্ড সার্ভিল্যান্স। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার নির্লজ্জভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। পেগাসাস স্পাইওয়্যার ২০১৭ সালে ইজরায়েলের সঙ্গে ২ বিলিয়ন ডলার চুক্তির কেন্দ্রবিন্দু ছিল বলে রিপোর্ট প্রকাশের পরেই প্রধানমন্ত্রীর সামান্য গোপনীয়তা প্রকাশ্যে এসেছে।’ পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরও নজরদারি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল।


শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০১৭-তে পেগাসাস কিনেছিল মোদি সরকার। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সহ অস্ত্র কেনার জন্য ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস কিনেছিল ভারত সরকার। যদিও এখন পর্যন্ত ভারত সরকার বা ইজরায়েল সরকার, কেউই স্বীকার করেনি যে ভারত পেগাসাস কিনেছে।


নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেগাসাস ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নতুন চুক্তির অধীনে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং ভারত সহ অনেক দেশকে দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইজরায়েল সফর করেছিলেন। সেই সময় মোদি এবং ইজরাজেলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে দেখা যায়। তবে দু’জনের মধ্যে দেখা এই উষ্ণতার কারণ ছিল, দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি।


২০২১ সালের জুলাই মাসে মিডিয়া গ্রুপগুলির একটি গ্লোবাল কনসোর্টিয়ামে প্রকাশ করা হয়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সরকার তাদের প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীদের গুপ্তচরবৃত্তি করতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে। আমাদের দেশের বহু সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, শীর্ষ গোয়েন্দা, সিবিআই-কর্তা, নির্বাচন কমিশনের অফিসার, বিচারপতির ফোনে পেগাসাসের মাধ্যমে আড়িপাতা হয়েছে বলে অভিযোগ।


কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও পেগাসাস ইস্যুতে কেন্দ্রকে একহাত নিয়েছেন। আমাদের প্রাথমিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, রাজনীতিবিদ এবং জনসাধারণের উপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য মোদি সরকার পেগাসাস কিনেছে। সরকারি কর্মকর্তা, বিরোধী দলের নেতা, সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ সকলকেই এই ফোন ট্যাপিং দ্বারা টার্গেট করা হয়েছে। এটা রাষ্ট্রদ্রোহ। মোদি সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছে। কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারাও এই ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন।


পেগাসাস স্পাইওয়্যার কী?
একটি হ্যাকিং সফটওয়্যার৷ ইজরায়েলের সংস্থা এনএসও গ্রুপ তৈরি করে৷ অর্থের বিনিময়ে এই সফটওয়্যার বিভিন্ন দেশের সরকারকে ব্যবহারের লাইসেন্স দেয়৷ বিশেষজ্ঞরা একে সাইবার অস্ত্র বলে থাকে৷ ২০১৬ সালে প্রথম পেগাসাসের কথা জানা যায়৷ আরবের এক সমাজকর্মী ফোনে সন্দেহজনক মেসেজ পান৷ প্রথমে মনে করা হয়, আইফোন ব্যবহারকারীদের টার্গেট করছে পেগাসাস৷ কিন্তু এই ভুল ভাঙে পরের বছর৷ বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যানড্রোয়েড ফোনও হ্যাক করতে পারে পেগাসাস৷ ২০১৯ সালে এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে কেস করে ফেসবুক৷ তার পরই জানতে পারা যায়, পেগাসাস ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভারতের বহু সাংবাদিক ও সমাজকর্মীর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে৷


কীভাবে হ্যাকিং হয়?
যাঁর ফোন হ্যাকিং হবে সেই ফোনে একটি ওয়েবসাইট লিঙ্ক পাঠানো হয়৷ লিঙ্কে একবার ক্লিক করলেই পেগাসাস ফোনে ইনস্টল হয়ে যাবে৷ শুরু হয়ে যায় ফোনে নজরদারি৷ হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস মেসেজ অথবা মিসড কলের মাধ্যমেও সফটওয়্যারটি ফোনে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে৷ ইনস্টল হওয়ার পর কল লগ থেকে মুছে দেয় সফটওয়্যারটি৷ ফলে ব্যবহারকারী জানতেও পারেন না কোন নম্বর থেকে মিসড কল এসেছিল৷ এর পর ব্যবহারকারী কার সঙ্গে কথা বলছেন, কী মেসেজ আসছে, ফোনের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা সব নিয়ন্ত্রণ করে পেগাসাস৷ এমনকী এনক্রিপটেড হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের তথ্য পড়ে ফেলতে পারে পেগাসাস৷
কোনও কম্পিউটার বা ফোন হ্যাক-প্রুফ নয়৷ ফোনে আড়ি পাতার জন্য অনেক টুল ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মতো সবথেকে আধুনিক ফোন হ্যাকিং টুল সম্ভবত আর দ্বিতীয়টি নেই৷ নিঃশব্দে কাজ করে পেগাসাস৷ ব্যবহারকারী জানতেও পারেন না তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে৷ তবে এই টুল ব্যবহার করে সবার ফোনে আড়ি পাতা সম্ভব নয়৷ কারণ, এই স্পাইওয়্যারটি কিনতেই লাখ লাখ টাকা খরচ হয়৷ সরকার বা বড় কোনও সংস্থা ছাড়া পেগাসাস কেনা সম্ভব নয়৷

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #tmc, #Pegasus, #Pegasus Spyware, #Pegasus Scandal

আরো দেখুন