বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

বাংলা গানের দুনিয়ায় সুরসাধিকা লতা মঙ্গেশকর

February 6, 2022 | 2 min read

অতিন্দ্রিয় সুর ও স্বরের সহাবস্থান হত তাঁর কণ্ঠে; তিনি যেন সাক্ষাত সরস্বতী। আজ থেকে তিনি অমৃতলোকের বাসিন্দা হলেন। সুদীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে সুরসম্রাজ্ঞী ৩৬টি ভাষায় অজস্র গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তার মধ্যে আমার আপনার মাতৃভাষাও রয়েছে। জন্মগতভাবে বাঙালি না হয়েও লতা মঙ্গেশকর কিন্তু আমাদের মাতৃভাষাকে প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছিলেন। তাই শুধু বাংলা শিখবেন বলে বাড়িতেই শিক্ষক রেখেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। তাঁর বাংলাভাষার শিক্ষক ছিলেন বাসু ভট্টাচার্য। বাংলা লিখতে ও পড়তে শিখেছিলেন তিনি। বাংলার দুই দিকপাল সঙ্গীতস্রষ্টা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সলিল চৌধুরী ছিলেন লতার শ্রদ্ধার দাদা।


লতার দীর্ঘ চলচ্চিত্র-সঙ্গীতজীবনে তিনি একাধিক বাঙালি সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সূত্র ধরেই বাংলায় তিনি প্রথম গাইতে আসেন। বাংলা ভাষায় মান্না দে-র সঙ্গেও কয়েকটি দ্বৈতসঙ্গীত গেয়েছেন তিনি। বাংলা বেসিক গান এবং বাংলা চলচ্চিত্র সঙ্গীত; দুই দুনিয়াতেই ইতিহাস তৈরি করেছেন লতা। 


লতা মঙ্গেশকর গোটা সঙ্গীত জীবনে ১৮৫টির মতো বাংলা গান গেয়েছেন। এরমধ্যে ‘প্রেম একবারই এসেছিল জীবনে’, ‘না যেও না’, ‘যা রে উড়ে যা রে পাখি’, ‘ওগো আর কিছু তো নয়’, ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘নিঝুম সন্ধ্যায়’, ‘চঞ্চল মন আনমনা হয়’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ’, ‘আজ মন চেয়েছে’র মতো কালজয়ী গান রয়েছে।


প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুর। ঐতিহাসিকভাবে এটাই লতা মঙ্গেশকরের প্রথম বাংলা ডিস্ক গান। তারপর নানা সময়ে বাঙালি শ্রোতাদের জন্য গেয়েছেন সুর সরস্বতী।


লতা তথা বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় এক অধ্যায় হল সলিল চৌধুরীর কথায়-সুরে লতার গান। এই সময়ের মধ্যে ‘যা রে উড়ে যা রে পাখি’, ‘অন্তবিহীন কাটে না আর’, ‘ঝিলিক ঝিলিক ঝিনুক’ ‘না যেও না’, ‘ওগো, আর কিছু তো নয়’ ইত্যাদি গানগুলো তৈরি হয়েছিল।’পা মা গা রে সা’, ‘ও প্রজাপতি প্রজাপতি’র বা ‘ও ঝর ঝর ঝরনা’র গানগুলো বলে দেয় রবীন্দ্র সঙ্গীত কোন উচ্চতায় পৌঁছেছিল।


‘ও মোর ময়না গো’, ‘জাগো মোহন প্রীতম’, ‘কিছু তো চাইনি আমি’, ‘কেন যে কাঁদো বারে’, ‘হায় হায় প্রাণ যায়’, ‘না মন লাগে না’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘কেন কিছু কথা বলো না’র মতো আশ্চর্য সব বাংলা আধুনিক গান তৈরি হয়ে তাঁর কণ্ঠের মায়ায়। লতা রবীন্দ্র সঙ্গীতও গেয়েছেন।


লতা মঙ্গেশকরের রবীন্দ্রসঙ্গীতের যাত্রাও শুরু হয়েছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে।১৯৫০-এর দশক ‘মধু গন্ধে ভরা’ গান রেকর্ড করে রবীন্দ্র গানের যাত্রা শুরু করলেন লতা। এছাড়াও তিনি গেয়েছেন ‘শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা’, ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে’, ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘তোমার হল শুরু’, ‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে’।

 
১৯৭০-এর দশকে তরুণ মজুমদারের ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ ছবির জন্যে কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে ‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে’ গাইলেন লতা। তরুণ বাবুর ছবি ‘কুহেলী’ ছবির জন্য ‘তুমি রবে নীরবে’ও গাইলেন তিনি। সারা জীবন মাত্র ছয়টি রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ড করেছেন তিনি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় মহিষাসুরমর্দিনীতেও বাঙালি লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠ শুনেছে। আজ সেই সব সৃষ্টি অমর, শিল্পী নিজেও অমর। শ্রোতাদের জন্য রত্নভান্ডার উজার করে দিয়ে শিল্পী ফিরে গেলেন…

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bengali songs, #Lata Mangeshkar

আরো দেখুন