ঢক্কানিনাদ ছাড়াই মানুষের পাশে মমতার সরকার, ১৩ লক্ষ পরিবারের বিদ্যুতের বিল মেটাচ্ছে রাজ্য
‘দাদা, আমার এমাসের ইলেকট্রিক বিলে কোনও টাকার অঙ্ক লেখা নেই। বিল না দেওয়ার কারণে পরের মাসে সবুজ রংয়ের বিল আসবে না তো? দু’মাসের টাকা একবারে চোকাতে হবে না তো?’
শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ের সিইএসসি অফিসে বিল জমা দেওয়ার কাউন্টারে দাঁড়িয়ে প্রশ্নগুলি ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। বিলের অঙ্কে ‘শূন্য’ লেখা থাকায়, রীতিমতো চিন্তায় তিনি। কারণ পরের বার দু’মাসের বিল মেটানো তাঁর পক্ষে কঠিন। কাউন্টারের কর্মী বোঝালেন, তিনি ২৫ ইউনিটের কম বিদ্যুৎ খরচ করেছেন। তাই তাঁকে কোনও বিল মেটাতে হবে না। তাঁর হয়ে রাজ্য সরকারই সেই বিল মিটিয়ে দেবে। তবু নাছোড় ওই ব্যক্তি। কিছুতেই তাঁর বিশ্বাস হচ্ছে না এই কথা। কাউন্টারের কর্মী জানালেন, প্রতিদিনই বেশ কয়েকজন আসেন, যাঁদের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রায় দু’বছর ধরেই এই রেওয়াজ চলছে।
বিদ্যুতের এই শূন্য-বিল কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। রাজ্যজুড়ে বহু গ্রাহকই জানেন না, তাঁদের বিল ২৫ ইউনিটের কম এলে, বিদ্যুৎ দপ্তর নিজেই সেই টাকা মিটিয়ে দেয়। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে রাজ্যে ‘হাসির আলো’ প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো সিইএসসি এলাকাই হোক বা বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা— গ্রাহকদের বিলের অঙ্ক ২৫ ইউনিটের কম হলে বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ মিলবে। যেহেতু বণ্টন সংস্থার আওতায় তিন মাস অন্তর বিল আসে, তাই সেখানে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ফ্রি। তবে শর্ত একটাই। মিটারের লোড ০.৩ কিলোওয়াট বা তার নীচে থাকলে এই সুবিধা মিলবে। বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্তারা বলছেন, যেহেতু বহু গ্রাহকের বিদ্যুতের খরচ স্থির নয়, তাই সব মাসে সবাই এই সুবিধা পান না। ফলে বিনামূল্যে বিদ্যুতের সুযোগ পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যাও বদলে যায় প্রতি মাসে। বিদ্যুৎ দপ্তর সূত্রে খবর, গত এক বছরে প্রতি মাসে গড়ে ১১ লক্ষ গ্রাহক বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পেয়েছেন। সিইএসসি সূত্রে খবর, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সেই সংখ্যা দু’লক্ষ। অর্থাৎ গড়ে ১৩ লক্ষ মানুষ বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ পাচ্ছেন প্রতি মাসে। বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্তারা বলছেন, এর আগে কেন্দ্রীয় সরকার একটি প্রকল্প চালু করেছিল, যেখানে সস্তায় এলইডি আলো পাওয়ার সুযোগ ছিল গ্রাহকদের। কিন্তু সেই প্রকল্প অনেক আগেই বন্ধ করে দেয় কেন্দ্র। ফলে রাজ্যের মানুষ সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাসির আলো প্রকল্পে কেন্দ্রের কোনও অনুদান নেই, এমনটাই জানাচ্ছেন দপ্তরের কর্তারা। কঠিন আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যেও রাজ্য এই আর্থিক ভার বহন করছে। কিন্তু এই স্কিমের সঠিক প্রচার না থাকায়, খুশি হওয়ার বদলে রীতিমতো চিন্তায় পড়ছেন বহু গ্রাহক, বলছে বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্তাদের একাংশ।