রাশিয়াকে এবার ভাতে মারবে আমেরিকা, পুতিনের দেশের ওপর একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা বাইডেনের
প্রত্যাশিতই ছিল। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপানো রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও বেশি করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেই আপাতত ক্ষান্ত দিল আমেরিকা। আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে আরও চারটি রাশিয়ান ব্যাংক। এছাড়া আমেরিকায় থাকা রুশ ব্যাংকের সমস্ত সম্পত্তি ফ্রিজ করল বাইডেন প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা জানিয়ে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden)। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এই যুদ্ধ শুরু করেছেন, তাঁকে ফল ভুগতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি বাইডেনের। এই মুহূর্তে যুদ্ধ এড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত বেশ তাৎপর্যপূ্র্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনের আরও অভ্যন্তরে ঢুকছে রুশ ফৌজ। বৃহস্পতিবার রাতে চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রের (Chernobyl nuclear power plant ) দখল নেয় তারা। ওই চত্বরে দেখা গেল রাশিয়ান ট্যাংক। ফলে আশঙ্কা বাড়ল আরও। তবে কি পরমাণু যুদ্ধে ঝাঁপাবে রাশিয়া? এই প্রশ্নে বুক দুরুদুরু সমর বিশেষজ্ঞদের। দক্ষিণ ইউক্রেনেও ঢুকছে পুতিনের ফৌজ। এবার তাদের হামলায় ১৩ সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
গত মঙ্গলবার রুশপন্থী বিদ্রোহীদের দখলে থাকা ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয় রাশিয়া। ফলে ক্রিমিয়ার পর আবারও বিভক্ত হয় ইউক্রেন। এহেন চরম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠকে বসে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা বৈঠক। কিন্তু তাতে ফল বিশেষ হয়নি। উলটে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চিন। বৃহস্পতিবারই ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের (Ukraine-Russia War) ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin)। অর্থাৎ কার্যত ইউক্রেন দখলের পথেই হাঁটল মস্কো। রাশিয়ার এই চরম পদক্ষেপে কার্যত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডঙ্কা বাজিয়ে দিল বলেই মনে করেছে ওয়াকিবহাল মহল। যার বিরাট প্রভাব পড়তে চলেছে গোটা বিশ্বে।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই ইউক্রেনে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাশিয়ান ফৌজ। দিনভর নানা জায়গায় হামলা চালিয়ে সন্ধের দিকে রাজধানী কিয়েভের দিকে এগোতে থাকে তারা। কিয়েভ, খারকভের বিমানঘাঁটি দখল করে সেসব তছনছ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দৃঢ়প্রত্যয়ী জানান, এসব বিমানঘাঁটি রাশিয়ান ফৌজের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করবেন। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে যোগ্য জবাব দিতে G7 গোষ্ঠীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক সারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এরপরই তিনি রাশিয়ার উপর আরও বেশি করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এদিন এই একই পথে হেঁটেছে ব্রিটেনও। বরিস জনসন সরকারও বেশ কিছু ব্যাংকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। NATO অন্তর্ভুক্ত দেশ এই যুদ্ধে শামিল হবে না বলেও সাফ জানিয়েছেন তিনি। তবে সেনা কমান্ডোদের পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার এ নিয়ে NATO’র গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। তাতে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত বাইডেনের।
বাইডেন বলেন, ”আমি জানি, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপালেই পুতিন আগ্রাসন থামাবেন না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি এর ফল তাঁকে ভুগতে হবে। রাশিয়ানরা বুঝতে পারবেন, তাঁরা কী বিপদ ডেকে এনেছেন।” সোভিয়েত ইউনিয়ন পুনর্গঠনে আগ্রহী পুতিন, এই অভিযোগও শোনা গেল তাঁর কথায়। তাঁর এই কথাতেই অনেকটা স্পষ্ট যে রাশিয়ার উপর এমন নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে নিজেই যথেষ্ট সন্দিহান বাইডেন। ইউক্রেন নিয়ে ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে আমেরিকার।