রাতভর বরফের ওপর হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে রোমানিয়ায় পালিয়ে আসেন দুর্গাপুরের দুই বাসিন্দা
রাতভর তুষারাবৃত রাস্তায় পায়ে হেঁটে যুদ্ধ আক্রান্ত ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে শনিবার পড়শি দেশ রোমানিয়ায় এসে পৌঁছলেন দুর্গাপুরের বাসিন্দা দুই ডাক্তারি পড়ুয়া। নেহা খান ও জিন্নাত আলম তাঁদের নাম। টানা তিনদিন ধরে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় কাটানোর পর এদিন তাঁদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে। তাঁদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রোমানিয়া প্রশাসনের সহযোগিতায় খাওয়া ও থাকার সুব্যবস্থা হয়েছে। মিলেছে ভারতে ফেরার জন্য ভিসার সাময়িক অনুমতিও।
নেহা খান দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের এ-জোনের বাসিন্দা। পড়াশোনার সূত্রে তিনি ইউক্রেনের ইভানো শহরের থাকতেন। ইভানো ফ্রাঙ্কিভিস্ক ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। অপর পড়ুয়া জিন্নাত আলম দুর্গাপুরের মসজিদ মহল্লার বাসিন্দা। তিনিও ওই ইউনিভার্সিটিরই তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বৃহস্পতিবার রাশিয়ান সেনাবাহিনীর হামলায় কেঁপে ওঠে ইভানো শহর। কালো ধোঁয়ার মেঘে আকাশ ঢেকে যায়। ওইদিন সকালে মিসাইল ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভাঙে নেহা ও জিন্নাত সহ ওই শহরের বাসিন্দাদের। তাঁদের ফ্ল্যাট থেকে মাত্র প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে মূহুর্মূহু বিস্ফোরণ হতে থাকে। নিরাপত্তার জন্য পড়ুয়াদের বহুতলের নীচে বাঙ্কারে স্থানান্তরিত করা হয়। জল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। খাবারের সঙ্কট শুরু হয়। ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে কাটাতে হয় তাঁদের। পরিবারের লোকজনের দুশ্চিন্তায় ঘুম ও খাওয়াদাওয়া উধাও হয়ে যায়।
নেহা ও জিন্নাতের বাবা যথাক্রমে ফিরোজ খান ও সাদার আলম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ নেহা ও জিন্নাত সহ প্রায় ১৫০ জনের বেশি পড়ুয়া ইভানো শহর থেকে তিনটি বাস ভাড়া করে রোমানিয়া সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ওই দিন রাতে রোমানিয়া এসে পৌঁছন তাঁরা। তবে রোমানিয়া সীমান্তে প্রবেশ করতে আরও প্রায় ২০ কিলোমিটার বরফের ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে। বরফের ওপর দিয়ে হেঁটে তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অবসন্ন শরীরে সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ রোমানিয়ায় পৌঁছন ওই পড়ুয়ারা। সেখানে রোমানিয়া সরকার তাঁদের একটি হোটেলে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছে। রোমানিয়া সরকারের সাহায্যে ভারতীয় দূতাবাস তাঁদের ভিসার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। ওই দেশে আপাতত কোনও সমস্যা নেই। কোনও দুর্ঘটনার বা বিপদের আশঙ্কাও নেই। এবার রোমানিয়া বিমানবন্দর থেকে বিমানে চেপে ভারতে আসার অপেক্ষা।