মধ্যগগনে যুদ্ধ, এবার পরমানু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি রাশিয়ার
এক সপ্তাহ কেটে গেল। যুদ্ধ এখনও মধ্যগগনে। বুধবার সকালেই কৃষ্ণসাগরের তীরে ইউক্রেনের বন্দর-শহর খারসনের দখল নিয়েছে রুশ সেনা। খারকিভেও হামলা অব্যাহত। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেখানকার মেডিক্যাল সেন্টার। রাজধানীর কিয়েভের বাইরে রীতিমতো চক্রব্যূহ সাজিয়েছে পুতিন-বাহিনী। জাইটোমির, নিকোলভে চলছে লাগাতার গোলাবর্ষণ। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিলেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। দিলেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিতও। জবাব আসতে দেরি হয়নি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মস্কোকে প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জে বাইডেন। বলেন, ‘এর কী পরিণাম হতে চলেছে, সে বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কোনও ধারণা নেই।’
রুশ সেনার বোমাবর্ষণে এদিন সকালেই খারকিভে মারা গিয়েছেন ২১ জন। আহত শতাধিক। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দু’হাজারের বেশি সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইউক্রেন। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে গোলাবর্ষণ বন্ধ করার আর্জি জানান প্রেসিডেন্ট ভোলোদামির জেলেনস্কি। কিন্তু মস্কো যে কিয়েভ দখলে মরিয়া, তা এদিন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন লাভরভ। তাঁর হুঁশিয়ারি, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োগ হবেই। এবং তা হবে ভয়াবহ বিধ্বংসী।
তারই জবাবে এদিন মার্কিন কংগ্রেসে ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ বক্তৃতায় মুখ খোলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বলেন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়াকে অদূর ভবিষ্যতেই ফল ভুগতে হবে। পুতিনকে স্বৈরাচারী আখ্যা দিয়ে রাশিয়ার বিমানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি। তাঁর কথায়, এর মূল্য গোটা বিশ্বকে চোকাতে হবে। তবে, ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ালেও মার্কিন সেনা এই যুদ্ধে অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন বাইডেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও পুতিনের পদক্ষেপকে যুদ্ধাপরাধ বলেছেন। তবে যুদ্ধ যে এত সহজে থামবে না, দ্বিতীয় দফার শান্তি বৈঠক ভেস্তে যাওয়াতেই তার ইঙ্গিত মিলেছে। রাশিয়া রাজি হলেও ইউক্রেনের তরফে শান্তি বৈঠক নিয়ে রাত পর্যন্ত কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তরফে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ক্রমে জোরালো হচ্ছে। তার জেরে এদিন ইউরোপের বাজার ছাড়ার ঘোষণা করেছে রাশিয়ার বৃহত্তম ঋণদানকারী সংস্থা সবেরব্যাঙ্ক। ইইউয়ের পক্ষ থেকে এদিন আরও সাতটি রুশ ব্যাঙ্ককে সুইফট ব্যবস্থা থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে, অ্যাপল, বোয়িংয়ের মতো সংস্থাও এদিন রাশিয়া থেকে ব্যবসা গোটানোর কথা জানিয়েছে। চীন অবশ্য এদিন সাফ জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করছে না। তবে সবথেকে আশ্চর্যের তথ্য, গতকাল ৬৪ কিমি দীর্ঘ যে রুশ সেনা কনভয়ের ছবি দেখা গিয়েছিল, সেটি এখনও কিয়েভের দিকে বেশি দূর এগতে পারেনি।