নবীনের মৃত্যুর পর আতঙ্কে দিন কাটছে ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়াদের
মৃত্যুর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়ারা। পড়ুয়ারা পড়েছেন উভয় সংকটে, না মিলছে ইউক্রেনের সাহায্য, না রেহাই পাচ্ছেন রাশিয়ার সেনাবাহিনী থেকে, যার কারণ বিজেপি সরকারের ভ্রান্ত বিদেশনীতি। অন্যদিকে দেখা নেই ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের। মোদী সরকার নিষ্ক্রিয়। বিমান আক্রমণের আগাম সঙ্কেত প্রদানকারী সাইরেনের আওয়াজ বিগত দুদিনে শোনেননি খারকিভে আটকে পড়া পড়ুয়ারা। রুশ সেনারা শহরের সেন্সরগুলো সব নষ্ট করে দিয়েছে। শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রুশ সেনা। ইউক্রেনের গেরিলা বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণ এড়াতে রুশ বাহিনীও সামরিক পোশাক ছেড়েছে। ফলত কে শত্রু, কে মিত্র তা আর বোঝার উপায় নেই।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়ে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে দমদমের দীপশিখা দাসদের। কার্ফুর মধ্যেও বাজার করার জন্য মিয়েছিল ছাড়। বেকেটোভার যে শেল্টারে দীপশিখারা আছেন, সেখান থেকে খারকিভ সিটি কাউন্সিল ভবন দেখা যায়। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত খারকিভ। সেখানেই কিছুক্ষণের জন্য কার্ফু উঠে যাওয়ায় একদল ডাক্তারি পড়ুয়া রসদ মজুত করার জন্য তড়িঘড়ি বেরিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন কর্নাটকের শেখরাপ্পা জ্ঞানগউধর নবীন। স্পিলন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় নবীনের দেহ। আর খাবার কেনা হয়নি নবীনের বন্ধুদের। খারকিভের আটকে থাকা বহু ভারতীয় পড়ুয়া এখন আতঙ্কে। ভারতীয় দূতাবাস বা মোদী সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি বলেই এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ইউক্রেনের আটকে থাকা হালিশহরের বাসিন্দা চয়ন কুমার, নির্মল কুমারেরা।
মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে দীপশিখা এক বেসরকারি সাংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘আশ্বস্ত হওয়ার মানসিক অবস্থাতেই নেই, সেটা কি দেশের নেতা, কূটনীতিকেরা বুঝতে পারছেন না? চোখের সামনে বন্ধুকে হারালাম। খাওয়ার জল নেই, শৌচাগারের জল যেটুকু আছে সেটাই খাচ্ছি। রুশ সৈন্য ভারতীয়-অভারতীয় মানছে না। আমাদের একাধিক বন্ধুকে ওরা মেরেছে, মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে এর পরেও!’’ দীপশিখার কথা থেকে জানা যাচ্ছে, তারা যেখানে আটকে রয়েছেন সেখান থেকে মস্কোর দূরত্ব মাত্র তিন ঘণ্টার। রাশিয়া সরকার যদি ভারতীয়দের প্রতি উদারই হবে, তবে তো মস্কো থেকে পড়ুয়াদের ফেরানো হত। যারা মস্কো হয়ে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন তাদের কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে খারকিভ থেকে হাঙ্গেরি বা পোল্যান্ডের যাত্রাপথ ২২ ঘণ্টার, সেই পথে যাওয়া কার্যত অসম্ভব।
পড়ুয়াদের তরফে জানা গিয়েছে, খারকিভে আটকে থাকা পড়ুয়াদের অনেকেই আজ, বুধবার প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ইউক্রেনের পূর্বএ বেলারুস সীমান্ত দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করবেন। নিজেদের পোশাকে ভারতের জাতীয় পতাকা এঁকে নিয়েছেন তাঁরা। তাদের দাবি, এতে যদি রুশ সেনারা প্রাণভিক্ষা দেন, সেই ভেবে তারা এমনটা করছেন। কেউ ট্রেন, কেউ আবার ক্যাব ভাড়া করেছেন। মঙ্গলবার হালিশহরের গোয়ালাপাড়ার বাসিন্দা পূজা ঘোষসহ জেপোরিঝিয়া স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ১৪৯৭ জন পড়ুয়াকে নিয়ে জেপোরিঝিয়া স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে তারা হাঙ্গেরিতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, সেখানে থেকে তারা বুদাপেস্টে যাবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তারপর সেখান থেকে দেশে ফিরবেন তারা। সীমান্তে অবশ্য প্রথমে ইউক্রেনের মহিলা ও শিশু, তার পরে বিদেশিদের মধ্যে থেকে গর্ভবতী, শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ, সবশেষে পুরুষদের পার করানো হচ্ছে। ফলে অনেকেই শরীরের তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার কারণে অসুস্থ হচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।