গুলিবিদ্ধ হলে দায়ী হবে মোদী সরকার, হুঁশিয়ারি সুমিতে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়াদের
কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েই শেষপর্যন্ত পথে নামার কথা ঘোষণা করলেন সুমি স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল ভারতীয় পড়ুয়া (Indian Students in Ukraine)। টানা তিনদিন অভুক্ত ও নির্জলা থাকার পর প্রাণের তোয়াক্কা না করেই তাঁরা সীমান্তের উদ্দেশে রওয়ানা দিতে চান। রুশ সীমান্তের দিকে রওয়ানা হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে এই পড়ুয়ারা একটি ভিডিও টুইট করেন। সেখানে তাঁরা বলেন, পথে যদি তাঁরা গুলিবিদ্ধ হন বা রুশ গোলায় প্রাণ হারান, তাহলে তাঁদের মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে কেন্দ্রীয় সরকার ও কিয়েভের ভারতীয় দূতাবাস।
টুইটে এই পড়ুয়াদের অভিযোগ, যুদ্ধ লাগার পর দশদিন তাঁরা অপেক্ষা করেছেন। শুক্রবারও তাঁদের জানানো হয়েছিল শনিবার সকালের মধ্যে উদ্ধার করা হবে। কিন্তু, ভারতীয় দূতাবাস বা বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে তখনও পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। ভিডিওতে এক চিকিৎসক পড়ুয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আজ শুনলাম রাশিয়া দু’টি শহরে উদ্ধারের জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে একটি শহর হল মারিওপোল, যা এখান থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে। এখানে কোনও যুদ্ধবিরতি (Ukraine-Russia War) নেই। সকাল থেকে প্রবল বোমাবর্ষণ, স্ট্রিট ফাইট চলছে। আমাদের খুব ভয় লাগছে। আমরা হোস্টেলে বন্দি হয়ে থাকলেও মারা যাব, আবার রাস্তাতে বেরোলেও মরব। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনই সীমান্তের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ছি। রাস্তায় গুলি লাগলে বা প্রাণ গেলে ভারত সরকার ও ভারতীয় দূতাবাস দায়ী থাকবে। ‘অপারেশন গঙ্গা’ সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’’ এই টুইট নিয়ে দেশে শোরগোল পড়ে যেতেই শনিবার বিকেলে বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে পড়ুয়াদের কাছে হোস্টেল ছেড়ে না বেরোতে কাতর আবেদন করা হয়।
রাশিয়ার লাগাতার গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের (Ukraine) পূর্বাংশের শহর সুমি। এই শহরেই এখনও আটকে অন্তত ৭০০ ভারতীয় ডাক্তারি পড়ুয়া। কীভাবে তাঁদের উদ্ধার করে আনা হবে তা নিয়ে শনিবারও কোনও ইতিবাচক পথ খুঁজে পেল না ভারত। শুক্রবার সুমিতে আকাশ পথ থেকে রুশ সেনা এমন বম্বিং করে যে সারা শহর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে গিয়েছে জল সরবরাহের লাইনও। জলের সংকটে পরিস্থিতি এমনই যে আটকে থাকা পড়ুয়ারা খাবার রান্নাও করতে পারছেন না। শিবাঙ্গী জয়সওয়াল নামে এক পড়ুয়া তাঁদের বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার ভিডিও দৃশ্য শেয়ার করে বলেন, “গতকাল সারা রাত আমরা অন্ধকারে কাটাই। বিদ্যুৎ ও জল না থাকায় রান্নাও করতে পারছি না। আমরা বোমার আঘাতে না মরলে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার জন্য নিশ্চিতভাবে মরে যাব।”
ভিডিওয়ে দেখা গিয়েছে, রুফ চ্যানেলে জমে থাকা বরফ ও জল সংগ্রহ করছে পড়ুয়ারা। তা দিয়েই হবে রান্না। মিটবে তেষ্টা। শিবাঙ্গী জানান, সুমি সংলগ্ন সমস্ত রাস্তা ও রেল লাইন কার্যত ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। শহর পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সরকারি সাহায্য ছাড়া পালানো অসম্ভব। তাঁর কথায়, “একমাত্র সরকার এ ব্যাপারে মাথা ঘামিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ালে তবেই আমরা পালাতে পারব। কিন্তু মনে হচ্ছে, সুমির জন্য কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়নি।” ইউক্রেনের সুমিতে আটকে পড়া অসমের পড়ুয়ারাও দ্রুত উদ্ধারের জন্য আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিদেশমন্ত্রী জয়শংকরকে টুইট করেছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না হলে এত পড়ুয়াকে ইউক্রেন থেকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব নয় বলে আগেই জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি। অন্যদিকে উদ্ধারকাজে কেন্দ্রীয় সরকারের ঢিলেমি নিয়ে বিরক্ত সুমির আর এক ভারতীয় পড়ুয়া জারা আজান। তাঁর প্রশ্ন, “সরকার বলছে তাদের বাস আমাদের জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করবে। তোমরা যদি গোলাবর্ষণের ভয়ে আমাদের কাছে এসে পৌঁছতে না পারো, তাহলে কলজ পড়ুয়ারা কী করে বাস, ট্যাক্সি, ট্রেন ছাড়া সীমান্তে পৌঁছবে বলে আশা করে? গতকাল কয়েকটা যুদ্ধবিমান আমাদের হস্টেল চত্বরে বোমা ফেলে। তাতেই কয়েকজন পড়ুয়াা আতঙ্কে জ্ঞান হারায়। শিশুরাও প্যানিক অ্যাটাক আর ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে।”