বন্ধ টিকটক, নেটফ্লিক্স! পুতিনের বিরোধীতা করে গ্রেপ্তার ১৩ হাজার রুশ নাগরিক
রাশিয়ার লাগাতার হামলায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন প্রতিবেশী ইউক্রেন। অপ্রত্যাশিত হলেও, রুশ সেনাকে মুখের উপর ‘জবাব’ দিচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনীও। বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী— পণ করে অস্ত্র হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার মোকাবিলা করছেন ইউক্রেনের আমজনতাও। পুতিনের আগ্রাসনে ত্রস্ত গোটা বিশ্ব।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এর ঘোষণার পর কেটে গিয়েছে ১৩ দিন। এই প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কী চান পুতিন? নিরপরাধ সাধারণ ইউক্রেনীয় নাগরিকদের যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার দায় যেমন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকেই নিতে হবে, তেমনই জবাব খোঁজার প্রক্রিয়া জারি থাকবে, কেন ইউক্রেন আক্রমণ করার মতো পদক্ষেপ করতে হল পুতিনকে? নেপথ্যে কোন আশঙ্কা?
এই প্রেক্ষিতে রাশিয়ার উপর একাধিক কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর প্রক্রিয়া চলছে। তার সর্বাগ্রে আমেরিকা ও পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ। পাল্টা হিসেবে, সামগ্রিক ভাবে পশ্চিমী বিশ্বের জনমত যাতে রুশ জনতাকে ‘বিপথে’ চালিত করতে না পারে, তা রুখতে দেশের মধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করেছে মস্কোও।
ক্রেমলিন ফতোয়া জারি করেছে, এমন কোনও তথ্য বা খবর সম্প্রচার করা যাবে না, যা রুশ সেনার কার্যকলাপকে ‘খারাপ চোখে’ দেখায়। অন্যথায় ১৫ বছরের জেল ও জরিমানা। ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’কে হামলা, আগ্রাসন বা যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে অভিহিত করলেই তা ভুয়ো খবরের আওতায় পড়বে বলেও ফতোয়ায় সাফ জানানো হয়েছে।
পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের একটি অংশের দাবি, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রাশিয়ায় কাজ করা সাংবাদিকদের জন্য ভীত।
পশ্চিমী দুনিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট এবং ‘ফেসবুক’কে রাশিয়ায় ‘ব্লক’ করা হয়েছে। পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, রুশ জনতাকে যুদ্ধ সংক্রান্ত খবরাখবর দেওয়া রুখতেই ক্রেমলিনের এই পদক্ষেপ।
পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, রাশিয়ায় এখনও পর্যন্ত ১৩ হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরাধ— তাঁরা সবাই যুদ্ধ বিরোধী অবস্থান থেকে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরোধিতা করতে পথে নেমেছিলেন।
রুশ জনতার কাছে সারা বিশ্বের তথ্য পৌঁছনো রুখতে পুতিনের কার্যকলাপের মধ্যেই কার্যত একই রকম পদক্ষেপের পথে যাচ্ছে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থাও। পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার যোগও ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। সেই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন ‘নেটফ্লিক্স’ ও ‘টিকটক’। এই দুই সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, তারা রাশিয়ায় পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ কিংবা কিছু পরিষেবা বন্ধ করে দিচ্ছে। ‘নেটফ্লিক্স’ ইতিমধ্যেই রাশিয়ার জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার সে দেশে বন্ধ করে দিয়েছে।
রাশিয়াকে গোটা বিশ্বে আরও একঘরে করতে উদ্যোগের অভাব নেই আমেরিকারও। শোনা যাচ্ছে, রাশিয়ায় উৎপাদিত তেলের উপর দুনিয়ার নির্ভরতা কমাতে ভেনেজুয়েলার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার কথা ভাবছে হোয়াইট হাউস। উগো চাভেজের দেশে বিপুল পরিমাণ তেল উৎপাদন হয়। যা ইদানীং বাকি বিশ্বের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। এ বার কি তা নাগালে আসবে, এই জিজ্ঞাসার পাশাপাশিই প্রশ্ন উঠছে, ভেনেজুয়েলার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর কারণ কী ছিল? কেনই বা তা প্রত্যাহারের ভাবনা!
সব মিলিয়ে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যতই পূর্ব ইউরোপে হোক না কেন, তার অভিঘাত ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বেই।