কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

টোটোর হাত ধরেই জীবন বদলের সংগ্রাম রেখা-পার্বতীদের

March 8, 2022 | 2 min read

তাঁদের কাছে ‘জীবন’ হল প্রতিকূলতার একটি সমার্থক শব্দমাত্র। এখানে সুখ হল কেতাবি শব্দ, আর লড়াই ভবিতব্য। কখনও শ্বশুরবাড়ি, কখনও আবার সমাজ তাঁদের ঠেলে দিয়েছে প্রতিকূলতার অগ্নিকুণ্ডে। কোথাও পুরুষতান্ত্রিকতার যাঁতাকল, আবার কোথাও সামাজিক বিন্যাসের সাঁড়াশি চাপ তাঁদের পরীক্ষা নিতে চেয়েছে বারংবার। কারণ তাঁরা ‘নারী’। কিন্তু তাও তাঁরা দগ্ধ হননি অগ্নিকুণ্ডের সেই লেলিহান শিখায়। চোখে চোখ রেখে লড়ে যাচ্ছেন জীবন বাঁচাতে। শত শত এমন নারীর মধ্যেই অন্যতম হলেন রেখা আর পার্বতী। জীবন যুদ্ধে নেমে তাঁরা হাতে তুলে নিয়েছেন টোটোর হাতল। তাঁদের জন্য কোনও নির্দিষ্ট একটি দিন নয়, বরং ৩৬৫ দিনই ‘নারী দিবস’।

রেখা রাউত দুই সন্তানের মা। ঘরের দায়িত্ব সামলে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে টোটো নিয়ে পথে নেমেছেন তিনি। স্বামী নেই, ফলে সংসারের সব দায়দায়িত্বই তাঁর। ২০১৩ সালে আত্মহত্যা করেন তাঁর স্বামী। সেই সময় তাঁর ছেলে এবং মেয়ের বয়স যথাক্রমে পাঁচ ও দু’বছর। কার্যত অথই জলে পড়ে যান হুগলির মাখলা সায়েন্স ক্লাব এলাকার বাসিন্দা রেখা। কখনও আয়ার কাজ, কখনও আবার লোকের বাড়ি রান্নার কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। করোনার বাড়বাড়ন্তে চলে যায় সেই সব কাজ। বাধ্য হয়ে পথে নামেন টোটো হাতে। শুধু পেট চালানো নয়, দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচও যে তাঁকে তুলতে হবে। কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা খায় তাঁর উদ্যোগ। কারণ তিনি নারী। রেখা বলেন, টোটো চালাতে শুরু করেছি বলে পুরুষ টোটো চালকরা বাধা দেওয়ার বহু চেষ্টা করেছে। অনেক জায়গায় যাত্রী পর্যন্ত তুলতে দেয়নি। মহিলারা টোটো নিয়ে রাস্তায় নামলে নাকি তাদের রুজিতে টান পড়বে! এই অজুহাত খাড়া করে স্ট্যান্ডে পর্যন্ত গাড়ি লাগাতে দেয়নি। দাঁড়ানোর সুযোগ না পাওয়ায় তাই উত্তরপাড়া, মাখলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গাড়ি চালাই। কিন্তু যাত্রীরা আমাকে খুব সাহায্য করেন। তাই সংসার সামলেও টোটো কেনার টাকা পরিশোধ করতে পারছি অনায়াসে। আজ আমি সুখেই আছি। ছেলে কমার্স নিয়ে কলেজে পড়ছে, আর মেয়ে এবার মাধ্যমিক দিচ্ছে।


পার্বতী পাল হাওড়ার বাকসাড়ার সুকান্ত প্লেস এলাকার বাসিন্দা। পেটের তাগিদে তাঁকেও বেছে নিতে হয়েছে টোটো চালানোকে। অভাবের সংসারে স্বামীকে সাহায্য করতেই এই পথ নিয়েছেন তিনি। জটিল হৃদরোগ ও দুর্ঘটনায় এক চোখের দৃষ্টি হারালেও থামেনি তাঁর গাড়ির চাকা। আগে সামাজিক বিন্যাসের সাঁড়াশি চাপে ধাক্কা খেয়েছেন বহুবার। লোকের দুয়ারে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। তাই বাধ্য হয়েই বেছে নিতে হয়েছে বিকল্প পথ। বাকসাড়া থেকে আলমপুর রুটে আজ নিয়মিত ছোটে তাঁর টোটো। পার্বতী বলেন, অভাবের সংসারে স্বামীর একার রোজগারে কুলোয় না। তাই আমি তাঁকে সাহায্য করি টোটো চালিয়ে।

প্রসঙ্গত, রেখার মতো পুরুষ টোটো চালকদের চোখরাঙানি সহ্য করতে হয়নি তাঁকে। বরং এক্ষেত্রে সাহায্যই করেছে বাকিরা। তিনি বলেন, আমি যেখানে টোটো চালাই, সেখানে সব পুরুষ টোটো চালকরাই আমাকে খুব ভালোবাসে। তারা যেমন দরকারে ছুটে আসে, তেমনই যাত্রীদের কাছেও সম্মান পাই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#International Womens Day, #Rekha, #Toto, #Parbati, #Toto drivers

আরো দেখুন