দেশ বিভাগে ফিরে যান

চার মাসে গোবলয়ের ছয় রাজ্যে ৮৯টি বিদ্বেষমূলক ভাষণ! ধর্মীয় হিংসার শিকার সংখ্যালঘুরা

March 9, 2022 | 2 min read

নরেন্দ্র মোদী জমানায় যে যে কারণে দেশের বদনাম হচ্ছে তার মধ্যে ঘৃণা ভাষণ অন্যতম৷ একটি পরিসংখ্যান বলছে, গত চার মাসে উত্তর ভারতের ছ’টি রাজ্যে প্রায় ৯০টির মতো বিদ্বেষমূলক ভাষণ ও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে৷ প্রায় সব ক’টি মুসলিম বিরোধী৷ নেপথ্যে উঠে এসেছে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, হিন্দু রক্ষা দল, হিন্দু গো-রক্ষা দলের নাম এবং সর্বোতপরি বিজেপি৷ পাঁচ রাজ্য বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের সময় থেকে বিজেপি নেতাদের কু-কথা অকথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের পরিবেশকে আরও বিষিয়ে তোলে৷

এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন বেরিয়েছে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়ারে’৷ গত বছর অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনাবলী উল্লেখ করে তারা জানিয়েছে, ওই চার মাসে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা এবং বিহারে ৮৯টি ঘৃণা বা উস্কানিমূলক ভাষণ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হিংসা ও মারধরের মতো ঘটনা ঘটেছে৷ সবথেকে বেশি ঘটনা ঘটেছে অক্টোবরে৷ উৎসবের মরসুমে ২৯টির মতো ধর্মীয় হিংসা ছড়ায়৷ সবক’টি মুসলিম বিরোধী৷ যেমন, হরিয়ানাতে প্রকাশ্যে নমাজ পড়ার বিরোধিতায় একদল যুবক গোবর্ধন পূজা করা শুরু করে৷ মুখে মুখে ঘোরে সেই ‘গোলি মারো’ স্লোগান৷ ২০২০-র দিল্লি হিংসায় উস্কানি দেওয়া কপিল মিশ্রকে ওই বিরোধিতায় অংশ নিতে দেখা যায়৷ নয়ডা, গুরুগ্রাম, গৌতম বুদ্ধ নগর, বুলন্দশহরের মতো জায়গায় নবরাত্রির ছুঁতোয় মুসলিমদের মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য করে হিন্দুত্ববাদীরা৷ মধ্যপ্রদেশের সেধওয়ায় গরবা অনুষ্ঠানে ১০ বছরের এক মুসলিম ছেলের উপস্থিতি নিয়েই সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে৷ ভোপালে গরবায় অংশ নেওয়ার জন্য বজরং দলের হাতে ধরা পড়ে চার মুসলিম যুবক৷ পরে তাদের পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ হিন্দুদের গরবা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া যাবে না বলে রাতলম জেলার ৫৬টি প্যান্ডেলে মুসলিমদের সতর্ক করে পোস্টার সাঁটিয়ে দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ৷ এছাড়া বিভিন্ন ছুঁতোয় মুসলিমদের মারধর, জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা ইত্যাদি ঘটনা আকছাড় ঘটে৷

তুলনায় কম হলেও নভেম্বরেও এই সব কর্মকাণ্ড জারি রাখে কট্টর হিন্দুবাদীরা৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, আগ্রায় এক মুসলিম পোশাক বিক্রেতার দোকানে ভাঙচুর চালায় বিজেপি যুব মোর্চা৷ তারপর দ্বারকার একটি চার্চেও ঢুকে তাণ্ডব চালানো, লাভ জিহাদের নামে যুগলদের হেনস্থা ইত্যাদি তো ছিলই৷ তবে ডিসেম্বরের ধর্ম সংসদে মুসলিম গণহত্যার বীজ এই মাসেই পোতা হয়েছিল৷ একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে প্রকাশ্যে যতি নরসিংহানন্দ এবং ওয়াসিম রিজভি কট্টর মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের এককাট্টা হয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন৷ যেটা পরে হরিদ্বারের ধর্ম সংসদে চরম রূপ পায়৷

তারপর এল ডিসেম্বরের তিনদিনের সেই ধর্ম সংসদ৷ যেখানে মুসলিমদের সরাসরি গণহত্যার ডাক দিয়েছিলেন সাধু-সন্তরা৷ ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়, বিজেপি মহিলা মোর্চা নেত্রী উদিতা ত্যাগী প্রমুখ৷ ধর্ম সংসদ শুরুর একদিন আগে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত ধর্মান্তরিত সমস্ত মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের ‘ঘর ওয়াপসি’-র ডাক দিয়েছিলেন৷ কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা বড়দিন পালনেও বাধা দেয়৷ সান্তাক্লজের পোশাকে বাচ্চাদের স্কুলে যেতে বাধা দেয়৷ মধ্যপ্রদেশের একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দল৷

জানুয়ারি থেকে পুরোদমে শুরু হয়ে যায় উত্তরপ্রদেশে ভোট প্রচার৷ আর ভোট প্রচারে বিজেপি ধর্মীয় তাস খেলবে না, তা কখনও হয়েছে নাকি? ‘না আলি, না বাহুবলী, কেবল বজংর বলী’ বলে খবরের শিরোনামে চলে এসেছিলেন বিজেপি বিধায়ক নান্দীকিশোর গুজর৷ বিজেপি মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র সপা সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবকে তোপ দেগে বলেছিলেন, তিনি পাকিস্তান ও মহম্মদ আলি জিন্নাহকে বেশি ভালোবাসেন৷ উত্তরপ্রদেশের কৈরান এলাকায় ভোট প্রচারে গিয়ে সেই হিন্দু ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দেন অমিত শাহ৷ আর যোগী আদিত্যনাথ তো টুইটে খোলাখুলি জানিয়ে দেন, ‘ওরা জিন্নার অনুগামী, আমরা সর্দার পটেলের পূজারী৷’ এমন উদাহরণ আরও আছে, যা লিখে শেষ করা যাবে না৷

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Modi Government, #Hate speech, #India

আরো দেখুন