যুগোপযোগী বার্তা তারাপীঠে! মায়ের পায়ে দেওয়া যাবে শুধু ভেষজ আবির
তারা মায়ের চরণে বা কপালে টিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও রাসায়নিক মিশ্রিত নয়, ব্যবহার করতে হবে ভেষজ আবিরই। পর্যটদের উদ্দেশে এমনই আবেদন জানাচ্ছেন তারাপীঠ মন্দিরের সেবাইতরা। রাসায়নিক মিশ্রিত আবিরে যাতে মায়ের মূর্তির কোনও ক্ষতি না হয় তার জন্যই এই আবেদন। ১৮ মার্চ শুক্রবার দোল উৎসব। পরের দিন শনি ও রবিবার হওয়ায় এবছর তারাপীঠে প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে বলে আশা করছে মন্দির কমিটি। এবারও দোল উৎসবে শান্তিনিকেতনের বিকল্প জায়গা হয়ে উঠতে চলেছে তারাপীঠ। কারণ, এখন থেকেই হোটেল বুকিং করতে শুরু করেছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সহ ভিনরাজ্যের পর্যটকরা।
প্রতিবছরই দোল উৎসবে পর্যটদের ভিড় জমে তীর্থভূমি তারাপীঠে। কিন্তু গত দু’বছর সেই ভিড় আরও বেড়েছিল। কারণ, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে গত দু’বছর শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব বাতিল করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ফলে বড় অংশের পর্যটক তারাপীঠে চলে আসেন। এবারও শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে এতদিন যে পর্যটকরা শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব দেখে তারাপীঠে ভিড় জমাতেন, তাঁদের অনেকেই দোলের দিন সরাসরি তারাপীঠে আসার জন্য হোটেল বুকিং করতে শুরু করেছেন। ফলে এবারও ব্যাপক ভিড়ের আশা করছে মন্দির কমিটি। দোলের দিন অনেকেই তারা মাকে আবিরের টিপ বা চরণে আবির দিয়ে প্রণাম করেন। পর্যটকদের কেউ কেউ রাসায়নিক মিশ্রিত আবির ব্যবহার করেন। যার প্রভাব পড়ে মায়ের মূর্তিতে। নষ্ট হয় মায়ের সাজও। তাই এবার আগে থেকেই পর্যটকদের ভেষজ আবির ব্যবহারের আবেদন জানিয়েছেন মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়।
দোলের পরের দিন শনি ও রবিবার হওয়ায় অফিস থেকে স্কুল, কলেজে ছুটি। ফলে পর্যটকদের অনেকেই তিনদিনের জন্য অগ্রিম হোটেল বুকিং করতে শুরু করেছেন। তারাপীঠে প্রায় ছশো’র বেশি হোটেল। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ হোটেলের ৭০শতাংশ রুম বুক হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুনীল গিরি। নতুন বছরের শুরুতে করোনা বিধির গেরোয় হোটেল বন্ধ রাখতে হয়েছে। ফলে ব্যবসা মার খেয়েছে। স্বভাবতই দোল উৎসবে তীর্থভূমিতে আসার জন্য মানুষের আগ্রহ দেখে খুশি হোটেল ব্যবসায়ী থেকে সেবাইতরা। তারাময়বাবু বলেন, পরপর তিনদিন ছুটি পড়ায় এবছর দোল উৎসবে হাজার হাজার পর্যটকদের সমাগম ঘটবে বলে এখন থেকেই বোঝা যাচ্ছে।
তবে এবারও শান্তিনিকেতনের আদলে তারাপীঠে বসন্ত উৎসব বাতিল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিআরডিএ। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও মানুষের ভিড়ে যাতে সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায় তারজন্য এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন টিআরডিএর ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, তারাপীঠ থেকে পাঁচ কিমি দূরত্বে নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর জন্মস্থান ময়ূরেশ্বরের বীরচন্দ্রপুর। সেখানেও টিআরডিএর পক্ষ থেকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ফিবছর এখানে ধূমধাম করে দোল উৎসব পালন করা হয়। সেখানে বিদেশি পর্যটদেরও ভিড় জমে। তারাপীঠে আসা বহু পর্যটকও উৎসব দেখতে সেখানে হাজির হন। কিন্তু সেখানে রাত্রিবাসের তেমন কোনও ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরা তারাপীঠের হোটেলকে বেছে নেয়। ফলে দোল উৎসব তারাপীঠের হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছে কার্যত পৌষমাস হয়ে উঠতে চলেছে।