তীব্র হচ্ছে রুশ আক্রমণ, ইউক্রেন থেকে ভারতীয় দূতাবাস সরানো হল পোল্যান্ডে
যুদ্ধের ১৮ দিন। রুশ সেনার আক্রমণ আরও তীব্র হচ্ছে। রবিবার ভোর থেকে আকাশপথে হামলা চলেছে ইউক্রেনের প্রতিটি প্রান্তে। পশ্চিমে পোল্যান্ড সীমান্তে লাভিভ শহরের অদূরে আছড়ে পড়েছে অন্তত ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র। একটি সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন। আহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৩৪। লাগাতার হামলার মুখে শেষপর্যন্ত ইউক্রেন থেকে দূতাবাস সাময়িকভাবে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পরেই কিয়েভ থেকে দূতাবাস কর্মীদের স্থানান্তর করা হয়েছিল লাভিভে। সেখান থেকেই চলছিল যাবতীয় কাজ। এদিন একটি বিবৃতি জারি করে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, আপাতত ভারতীয় দূতাবাস পোল্যান্ডে সরানো হচ্ছে। ক্রমাগত বোমা-গুলি চলছে কিয়েভের সীমানায়। উপগ্রহ চিত্র অনুযায়ী, ইউক্রেনের রাজধানীর দিকে এদিন আরও আট মাইল এগিয়ে এসেছে ৪০ কিমি দীর্ঘ রুশ ‘ডেথ কনভয়’। কিয়েভের উত্তর-পূর্বে বুচা শহরে গণকবরের একটি ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। অদূরে ইরপিন শহরে পুতিন-বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে এক মার্কিন সাংবাদিকের। নিহতের নাম ব্রেন্ট রেনাউড (৫১)। আরও দুই মার্কিন সাংবাদিক আহত। তাঁরা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ইউক্রেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের দাবি, খারকিভের কাছে থাকা রাশিয়ান সেনাকে নাগরিকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। ফোনে আড়ি পেতে জানা গিয়েছে একথা। দখল হয়ে যাওয়া শহরগুলিতে কার্ফু জারি করেছে রুশ বাহিনী। এদিন ভোর থেকে ইউক্রেনের সব এলাকায় বিমানহানার সতর্কতা জারি হয়। সাইরেন বাজতে শুরু করে কিয়েভ থেকে খারসন, খারকিভ, ওডেসা, স্লোভিয়ানস্ক, ভিনিৎসিয়া, ভোলিন, জাপোরিজ্জা সহ একাধিক শহরে। কৃষ্ণসাগর এবং আজভ সাগরের দিক থেকে নাগাড়ে ধেয়ে আসে ক্রুজ মিসাইল। ওডেসার অদূরে কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী মাইকোলেয়িভে এয়ার স্ট্রাইকে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। অন্যদিকে, লাভিভ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাকসিম কোজিৎস্কি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানান, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর পিসকিপিং অ্যান্ড সিকিউরিটির উপর বিমান হানা চলেছে। ৩৫ জন মারা গিয়েছেন। এটি ইউক্রেনীয় সেনার প্রশিক্ষণকেন্দ্র। লাভিভ থেকে ৪০ কিমি উত্তর-পূর্বে ইয়াভোরিভ এলাকায় অবস্থিত। ন্যাটো সদস্য এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের যৌথ মহড়াও হয় এখানে। ন্যাটো সদস্য দেশ পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১২ মাইল দূরে হামলা চলায় উদ্বেগ বাড়ছে বাকি বিশ্বের। আবার
তবে এদিন সবথেকে বেশি চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মার্কিন সাংবাদিকদের খুনের খবরে। তাঁর ঘাড়ে গুলি করা হয়েছে। আহত এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, তাঁরা শহর ছেড়ে পালানো উদ্বাস্তুদের ভিডিও তুলতে যাচ্ছিলেন। ইরপিনের প্রথম ব্রিজটি পেরনোর পর একটি চেকপয়েন্টে তাদের আটকানো হয়। তারপরই নির্বিচারে গুলি চালায় রুশ সেনা। কিয়েভের পুলিস প্রধান আন্দ্রেই নেবিতোভের দাবি, প্রেস ব্যাজ দেখে জানা যায় নিহত ব্রেন্ট রেনাউড মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের একজন ভিডিও অপারেটর। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। যদিও তাদের দাবি, ব্রেন্ট কোনও ডেস্কের অ্যাসাইনমেন্টের অংশ হিসেবে ইউক্রেনে ছিলেন না। তাঁর ওই প্রেস ব্যাজটি বহু বছর আগে অন্য কাজের জন্য দেওয়া। এদিকে, বেলারুশের মোজির, হোমেল, নারৌলিয়ার মর্গগুলি রুশ সেনার মৃতদেহে ভরে উঠেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ট্রাকে করে নিয়ে দেহগুলি আসা হচ্ছে। তারপর বিমানে পাঠানো হচ্ছে রাশিয়ায়।