রুশ-বিরোধী নেতা নাভালনির নয় বছরের জেল, পুতিনের দমননীতি?
ইউক্রেনে (Ukraine) ধাক্কা খেয়েছে শক্তিশালী রুশ ফৌজ। এখনও কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হওয়ায় বাঙ্কারে বসে কমান্ডারদের একহাত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দেশের অভ্যন্তরের ক্রমে বাড়ছে দিচ্ছে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন। এহেন পরিস্থিতি রুশ বিরোধী নেতা এবং পুতিনের কড়া সমালোচক অ্যালেক্সেই নাভালনিকে (Alexei Navalny) নয় বছর জেলের সাজা দিল আদালত।
গত বছরখানেক ধরেই জেলে রয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক হিসেবে খ্যাত নাভালনি। ক্রেমলিনের অন্দরে চলা দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব তিনি। শুধু তাই নয়, ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলার ডাকও দিয়েছেন তিনি। এহেন পরিস্থিতিতে জালিয়াতি ও দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগে নাভালনকে দোষী সাব্যস্ত করে রাশিয়ার একটি আদালত। পাশাপাশি, আদালত অবমাননার দায়েও সাজা দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সেই সঙ্গে তাকে ১২ লক্ষ রুবল বা ১১ হাজার ৫০০ ডলার জরিমানাও দিতে হবে। সবমিলিয়ে, নাভালনির জেলের মেয়াদ বাড়িয়ে ন’বছর করা হয়েছে। মঙ্গলবার মস্কোর অদূরে পোকরভ শহরে কারাগারের মধ্যেই বিচারকের মুখোমুখি হন নাভালনি। রায়দানের পর বিচারক মার্গারিটা কতোভা এএফকি-কে বলেন, “নাভালনি জালিয়াতি করেছেন। সংঘবদ্ধ ভাবে দেশের সম্পত্তি নয়ছয় করেছেন তিনি।”
রায়দানের পর নাভালনি ও তার সমর্থকরা বলেছেন, এই রায় রাজনৈতিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মানবাধিকার সংস্থাগুলির অভিযোগ, জেলে নাভালনির উপর অত্যাচার করা হয়। ইনস্টাগ্রামে বিবৃতি দিয়ে নাভালনি বলেছেন, পুটিন আসলে সত্যের থেকে ভয় পাচ্ছেন। তিনি চান না, সত্য প্রকাশিত হোক। রাশিয়ার মানুষ তা জানুক। তাই তিনি সমানে সেন্সরশিপ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর তারা সত্যকে প্রকাশ করতে চাইছেন। নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে বলেছেন, ”নয় সংখ্যাটা আমার কাছে অর্থহীন। আমি তোমায় ভালবাসি। তুমিই আমার প্রিয়তম মানুষ। এই এতগুলো বছরে আমি তোমার জন্য শুধু গর্ববোধই করেছি।”
প্রসঙ্গত, বহুদিন ধরেই পুতিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব অ্যালেক্সেই নাভালনি। ক্রেমলিনের অন্দরে টাকা নয়ছয় ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে অতীতে বহু তথ্য ফাঁস করেছে নাভালনির সংস্থা ‘অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশন’। ফলে পুতিনের বিষনজরে রয়েছেন তিনি বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। ২০২০ সালের আগস্টের ২০ তারিখ সাইবেরিয়ার টমস্ক থেকে বিমানে মস্কো ফিরছিলেন নাভালনি। মাঝ আকাশে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। উপায় না দেখে ওমস্ক শহরে বিমানের জরুরি অবতরণ করিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা। নাভালনি ঘনিষ্ঠদের প্রাথমিক ধারণা, টমস্ক বিমানবন্দরে তাঁর চায়ে বিষ মেশানো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, নাভালনির স্নায়ুতন্ত্র ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল। বার্লিনে তাঁর চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। রাশিয়ায় ফিরতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।