বিদেশি টাকায় পাকিস্তানে সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে, দাবি ইমরানের
ইসলামাবাদে লক্ষ লোকের জমায়েতে বক্তৃতা করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ডাকা জমায়েতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজির হয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। বিপুল সেই জমায়েতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান অভিযোগ করলেন, বিদেশি অর্থে পাকিস্তানে সরকার বদলের ষড়যন্ত্র চলছে। কারণ তাঁর সরকার পাকিস্তানকে স্বাধীন বিদেশনীতির পথে নিয়ে যাচ্ছে। যা না পসন্দ ‘বিদেশি’ শক্তিদের।
পাকিস্তানের ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে আস্থাভোটের ঠিক আগে, রাজধানী ইসলামাবাদের প্যারেড ময়দানে রবিবার বিকেলে পিটিআই গণ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অমর বিল মারুফ’ (মানুষকে ভাল কাজ করার উৎসাহপ্রদান)। পাকিস্তানের বিভিন্ন কোণ থেকে হাজির হয়েছিলেন ইমরান সমর্থকেরা। লক্ষাধিক মানুষের সামনে আবেগমথিত কণ্ঠে ইমরান বললেন, ‘‘বাইরে থেকে আমাদের বিদেশ নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। বেশ কয়েক মাস ধরেই এটা টের পাচ্ছি। আমরা এ-ও জানি, কে এই লোকগুলোকে একজোট করছে, কিন্তু সময় বদলে গিয়েছে। এটা আর জুলফিকার আলি ভুট্টোর আমল নয়।’’ পাক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘বিদেশি অর্থের সাহায্যে পাকিস্তানে সরকার বদলের চক্রান্ত চলছে। এই কাজে আমাদের লোকেদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে। জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার লিখিত প্রমাণও আমার হাতে আছে। কিন্তু আমি দেশের স্বার্থের সঙ্গে আপস করতে শিখিনি।’’
বৈদেশিক অর্থে পাকিস্তানে পালাবদলের অভিযোগেই ইমরান একসূত্রে গেঁথে নেন বিরোধীদের। ২৮ মার্চ, সোমবার পাকিস্তানের ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে সম্মিলিত বিরোধীদের সামনেই সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে ইমরানকে। তার ঠিক আগে, ইসলামাবাদের ভিড়ে ঠাসা প্যারেড ময়দানে সেই বিরোধীদেরই বিদেশি ষড়যন্ত্রের শরিক করে দিলেন তিনি। একই সঙ্গে শোনালেন তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে পাকিস্তানে উন্নয়নের মাপকাঠিতে কী কী হয়েছে এবং তাঁর সরকার যদি টিকে যায়, তাহলে কী কী করার পরিকল্পনা, তাও।
৩৪২ সদস্যের ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে ইমরানের দল পিটিআই-এর রয়েছে ১৫৫ জন সদস্য। ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রয়োজন ১৭২ জন সদস্যের সমর্থন। পিটিআই-এর ১৫৫ ছাড়াও অন্তত ছ’টি রাজনৈতিক দলের ২৩ জন সদস্যের সমর্থন রয়েছে ইমরানের পক্ষে। কিন্তু সূত্রের দাবি, ইমরানের দলের অন্তত ২৪ জন অ্যাসেম্বলি সদস্য বিদ্রোহী হয়ে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ফলে পাটিগণিতের হিসেবে ইমরানের সরকার টেকানো কঠিন। এই অঙ্কের খবর অক্সফোর্ডের প্রাক্তনীর অজানা নয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আস্থাভোটের ফল আন্দাজ করেই ইসলামাবাদে সমর্থকদের উদ্দেশে আবেগে ভরা ভাষণ দিলেন ইমরান। তাঁর আসল লক্ষ্য সোমবারের আস্থাভোট নয়, বরং সাধারণ নির্বাচন। জনসভায় উপস্থিতির হার যদি ভোটবাক্সের ফলের সামান্যতম ইঙ্গিতও বহন করে, তা হলে রবিবার রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যেতে পারেন ৯২ সালে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ দেওয়া, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।