গদিচ্যুত ইমরান খান, এই প্রথম কোনও পাক প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা হারালেন আস্থা ভোটে
শনিবার মধ্যরাতে পাকিস্তানে চূড়ান্ত নাটকীয় পরিস্থিতির সাক্ষী রইল গোটা বিশ্ব। সৌজন্যে অনাস্থা ভোট। এই প্রথম পাকিস্তানের কোনও প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে গদিচ্যুত হলেন। পদ থেকে অপসারিত হন পাকিস্তানের ‘কাপ্তান’ ইমরান খান। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে উপস্থিত ১৭৪ জন সাংসদই ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট দেন। সেইসঙ্গে পাকিস্তানের ধারা বজায় রেখে পতন হল নির্বাচিত সরকারের। পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারলেন না পাকিস্তান তেহেরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান। আর স্পিকার ফল ঘোষণা করতেই সোল্লাসে ফেটে পড়েন বিরোধীরা। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পিএমএল (এন) নেতা তথা দেশের বিরোধী দলনেতা শাহবাজ শরিফ। অনাস্থা ভোটে জিতেই তিনি জানান, শুরু হতে চলেছে নতুন যুগ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, শনিবারই অনাস্থা ভোট হবে। সেইমতো গোটা বিশ্বের নজর ছিল পাকিস্তানের উপর। তিনবার অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যাওয়ার পর মধ্যরাতে ফের শুরু হয়। দেশজুড়ে জারি হয় লাল সতর্কতা। পার্লামেন্টের বাইরে রাখা ছিল প্রিজন ভ্যান। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় সংসদ চত্বর। সুপ্রিম কোর্টের বাইরে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। সমস্ত হাসপাতাল ও বিমানবন্দরে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। আধিকারিকদের দেশ ছাড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। অধিবেশন বসতেই বিবৃতি দেন ইমরান। বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমের বিরুদ্ধে এই লড়াই একার। কিন্তু অনাস্থা ভোট শুরুর আগেই ইমরানের প্রতি আনুগত্য রেখে ইস্তফা দেন স্পিকার আসাদ কাইজার এবং ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। কার্যনির্বাহী স্পিকারের দায়িত্ব নেন আয়াজ সাদিক। সরকারের পতন নিশ্চিত জেনে পার্লামেন্টে হাজির ছিলেন না পিটিআইয়ের কোনও এমপি। ফল প্রকাশের আগেই বাসভবন ত্যাগ করেন ইমরান। অনাস্থা ভোটে ফাঁকা মাঠে গোল দেয় বিরোধী জোট। ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট পড়ে ১৭৪টি।
এর আগে দ্বিতীয়বার অধিবেশন মুলতুবি হতেই টুইটারে নিজেদের বায়ো থেকে মন্ত্রী তকমা বাতিল করেন বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এবং ফাওয়াদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী ইমরান সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানালেও বলেই দিয়েছিলেন, তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন না। শেষ বল পর্যন্ত তিনি লড়াই চালাবেন। তার জন্য স্পিকারের মাধ্যমে অধিবেশন মুলতুবি করে বারবার সময় কিনতে চেয়েছিলেন ইমরান। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানায় তাঁর দল। কিন্তু, বিরোধীদের ঐক্যের কাছে কোনওভাবেই গদি ধরে রাখতে পারলেন না ইমরান। সরকারের পতন হতেই পদত্যাগ করেন একের পর এক মন্ত্রী। ইস্তফা দেন দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল। উল্লেখ্য, সরকারের পতনের জন্য ৩৪২ সদস্যের সংসদে বিরোধীদের প্রয়োজন ছিল ১৭২ সদস্যের সমর্থন।