বিজেপি সাংসদের পাশাপাশি পাটশিল্প নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনও
পাট শিল্প প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বিরুদ্ধে তোপ দেগে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, তার পাশাপাশিই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে তাঁর সংগঠনের একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আইএনটিটিইউসি ৪ মে জুট কমিশনার অফিসের সামনে চটকল শ্রমিকদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করছে কেন্দ্রীয় সরকারের ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। বাংলার পাটশিল্পকে ধ্বংস করার চেষ্টাকে সর্বতো ভাবে প্রতিহত করা হবে।’ ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বিষয়ে দীর্ঘদিন প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। তিনি ওই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও লিখেছেন। যেমন লিখেছেন অর্জুনও। প্রসঙ্গত, বুধবারেই অর্জুন জানিয়েছেন, তিনি মমতাকেও ওই বিষয়ে চিঠি লিখবেন।
এই ঘটনাপ্রবাহ থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছে অর্জুনকে নিয়ে। বলা হচ্ছে, মমতার দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে এগিয়েছেন অর্জুন। আর খানিকটা এগোলেই কালীঘাট। তৃণমূলের শ্রমিকনেতা ঋতব্রতের কথায়, ‘‘আমাদের এই দাবি বহুদিনের। কারও যদি বিলম্বে বোধোদয় হয়, তা হলে আমাদের কী করার আছে! এটা আমাদের দাবি। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বহুদিন ধরেই এই দাবি তুলে আসছেন। বাংলার পাটশিল্পকে বাঁচানোর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লিখেছেন। আমরা তাঁর সেই দাবি নিয়েই আন্দোলন করছি।’’
গত কয়েক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় সরকারের পাট নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ। বিশেষ করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। বাংলার পাটচাষি ও চটকল কর্মীদের দুরবস্থা নিয়ে বারবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ চোখ বন্ধ করে রয়েছেন বলে সোমবার অভিযোগ তোলেন অর্জুন। তাঁর বক্তব্য ছিল, কাঁচা পাটের দামের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত না বদলালে কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনেও নামতে পারেন তিনি। দল তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের মতো অভিযোগ না আনলেও তিনি তার তোয়াক্কা করছেন না বলেও দাবি করেন অর্জুন। ব্যারাকপুরের ডাকাবুকো সাংসদ বলেন, “যদি মানুষই আমার সঙ্গে না থাকেন, তা হলে কীসের দল? আজ আমি যা হয়েছি, মানুষের জন্য হয়েছি। নিজেও চটকলের শ্রমিক ছিলাম। আজ তাঁদের সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না। ফলে দাবি না মানলে ছেড়ে কথা বলব না।”
তার পরেই মঙ্গলবার অর্জুন ক্ষোভ প্রকাশ করেন জুট কমিশনারের বিরুদ্ধে। জুট কমিশনার মলয়চন্দন চক্রবর্তী অসত্য কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেন অর্জুন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টুইট করে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন অর্জুন। সেখানেই তিনি দাবি করেন, গত বছরের নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরে জুট কমিশনের দু’টি বৈঠক হয়। ২৬ নভেম্বর এবং ৬ ডিসেম্বর। অর্জুনের বক্তব্য, জুট কমিশনার দাবি করলেও রাজ্যের তরফে ওই বৈঠকে কুইন্টাল প্রতি পাটের দাম ছ’হাজার টাকা করার প্রতিশ্রুতি আদৌ মেনে নেওয়া হয়নি। এই অভিযোগ তোলার পাশাপাশি রাজ্যের পাটশিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে কি না দেখার জন্য সত্যানুসন্ধান কমিটি তৈরি প্রয়োজন বলেও দাবি করেছেন অর্জুন। তাঁর এই অবস্থানকেই তৃণমূলে ফেরার পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন বাংলার রাজনীতির কারবারিরা।
বুধবারেও অর্জুন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তার প্রেক্ষিতেই তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি তৃণমূলে যাচ্ছেন?
জবাবে তৃণমূলের এই প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, ‘‘তেমন কিছু হলে আপনারাই সবচেয়ে আগে জানতে পারবেন।’’ কিন্তু পাশাপাশিই তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে তিনি আর্জি জানাচ্ছেন, বাংলার পাটশিল্পকে বাঁচানোর জন্য। পাশাপাশিই জানিয়ে দেন, ওই আর্জি জানিয়ে তিনি মমতাকে চিঠিও লিখবেন। প্রয়োজনে একসঙ্গে আন্দোলনেও নামবেন।
তবে রাজ্য বিজেপির অর্জুন-ঘনিষ্ঠ এক নেতার দাবি, অর্জুন যেখানে রাজনীতি করেন সেখানে জুটমিল শ্রমিকদের প্রভাব যথেষ্ট। তাঁদের ভোটেই ২০১৯ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে জয় পেয়েছেন তিনি। তাই সেই মানুষগুলির প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা থেকেই এমন ‘কড়া অবস্থান’ নিয়েছেন তিনি। তা থেকে তাঁর দলবদলের সম্ভাবনা খোঁজা বৃথা।