বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে পাট ইস্যুতে মোদীকেই চিঠি লিখে বসলেন অর্জুন
আবারও বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে পাট ইস্যুতে সরাসরি মোদীকেই চিঠি লিখলেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। বিগত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যের পাট শিল্পের প্রতি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন অর্জুন। দফায় দফায় এ নিয়ে বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করতেও পিছপা হননি তিনি। এবার একেবারে মোদীকেই চিঠি লিখে বসলেন।
বাংলার পাটশিল্পকে ধ্বংস করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে মোদীর হস্তক্ষেপ চেয়ে এদিন চিঠি লেখেন বিজেপি সাংসদ। চিঠিতে অর্জুন লিখছেন, “কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল এখন অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। তিনি পাট বিশেষজ্ঞ নন, তাকে ভুল পথে চালিত করা হচ্ছে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাট শিল্পকে রক্ষা করার জন্য আমি তার কাছে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু আমি আর আশাবাদী নই।”
সেই সঙ্গেই তিনি লিখছেন, “আমি বাংলার পাটে অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ব্যারাকপুরের সাংসদ। সেখানে ২০ টি চটকল রয়েছে, যার মধ্যে ৬ টি পুরোপুরি বন্ধ। প্রায় ২০,০০০ শ্রমিক কর্মহীন। আমি আমার ভোটাদের কাছে, আমার সংসদীয় এলাকার মানুষজনের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে আমি চেষ্টার ত্রুটি রাখব না। তাই বাংলার পাট শিল্পের এই সংকটের সময় আমি আপনার সাহায্য চাইছি।”
বিগত সাত মাস ধরে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলার পাট শিল্প। নিত্যদিন চটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৬০,০০০ মানুষ কর্মহীন। কাঁচা পাটের যথার্থ মূল্য পাচ্ছে না চাষিরা। পাট এখন বাজারে ৭,২০০ টাকা প্রতি কুইনটাল দরে বিক্রি হচ্ছে, অন্যদিকে পাটকলগুলো থেকে ১১,০০০ টাকা প্রতি টনে পাট বিকোচ্ছে। বেশি দামে বাজার থেকে পাট কেনার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে এবং সরকারকে কম দামে পাটের ব্যাগ বিক্রি করেও জোর করা হয়। ২০১৬-এর সেপ্টেম্বর থেকেই এই চিত্র দেখা যাচ্ছে সর্বত্র যা চিঠিতে তুলে ধরেন অর্জুন সিংহ।
এই বিষয়ে টুইট করে তিনি অবশ্য টা ডিলিট করে দেন। কেন এমনটা করলেন টা নিয়ে হয়েছে ধোঁয়াশা।
তিনি চিঠিতে সরাসরি অভিযোগ করছেন, “আম্পানের কারণে গত বছর ৬০,০০০ হেক্টর জমি নষ্ট হওয়ায় পাট চাষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। পাটের মূল্যও কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ইচ্ছে করে কাঁচা পাটে সঠিক মূল্য ধার্য্য করা হচ্ছে না। দামে কারচুপি করে কমিয়ে, কোন অলিখিত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বাংলার পাট শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের পথেকে প্রশস্ত করা হচ্ছে।”
পাট শিল্পেরক্ষেত্রে দেশের সামগ্রিক ছবিটাও খুব ভাল নয়। উৎপদন কমছে, অন্তন সিএসিপি রিপোর্ট ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী, এমনটাই জানা যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে কৃষকদের পাট চাষেরক্ষেত্রে অনীহার জন্ম হয়েছে। ন্যায্য মূল্য না মেলায় তারা আর পাট চাষ করতে চাইছেন। চার লক্ষ পাট চাষীকে ভর্তুকি দিতে হবে নতুবা জুট কর্পোরেশনের উচিত দেশের সমস্ত পাট কিনে নেওয়া এবং পাটকলে পৌঁছে দেওয়া। প্রতি বছর পাটের দাম ঠিক করা, এমনই কিছু নিদান দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ। চিঠির শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাট শিল্পকে রক্ষা করার আর্জিও জানান তিনি।
পাশাপাশি, বেশ কিছু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও টুইট করে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্জুন।
কদিন ধরেই পাট নিয়ে বেসুরো অর্জুন। ক্রমশ বাড়ছে জল্পনা! তবে কি ঘরে ফেরার গান গাইতে শুরু করেছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ, তাই কি বারবার আক্রমণ করে চলেছেন বিজেপি সরকারকে ? এদিনের মোদীকে লেখা অর্জুনের চিঠি সে জল্পনাকে শুধু টিকিয়েই রাখল না, বরং কয়েকগুন বাড়িয়ে দিল।