পঞ্জাবে উদ্ধার হওয়া নরকঙ্কাল সিপাহী বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করা বাঙালি সৈনিকদের, জানিয়ে দিল ডিএনএ টেস্ট
পঞ্জাবের (Punjab) অজনালার নর কঙ্কাল রহস্যের সমাধান হল। ২০১৪ সালে অজনালার একটি কুয়ো থেকে ১৬০ বছরের পুরনো নর কঙ্কাল উদ্ধার হয়। যার পর ওই নর কঙ্কাল উৎস নিয়ে রহস্য তৈরি হয়। ডিএনএ (DNA) বিশ্লেষণ করে সেই রহস্যের সমধান করল হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির (Centre for Cellular and Molecular Biology) জেনেটিক গবেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, মৃতেরা ১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করা ২৬ নং বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের (26th Bengal Infantry Battalion) সেনা। ব্রিটিশ বাহিনী এই ভারতীয় সিপাহীদের হত্যা করে। ফলে মৃতদের অনেকেই বাংলার মানুষ ছিলেন বলা আন্দাজ করছেন গবেষকরা।
পঞ্জাবের অজনালার নর কঙ্কাল রহস্য নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ‘ফ্রন্টেয়ার ইন জেনেটিক্স (Frontiers in Genetics) জার্নালে। এই বিষয়ে যৌথভাবে গবেষণা চালায় বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট, পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্টার ফর সেলুলার এন্ড মলিকুলার বায়োলজি। ২০১৪ সালে উদ্ধার হওয়া ১৬০ বছরের পুরনো নর কঙ্কালের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছান গবেষকরা। যদিও এর আগে ওই মৃতদের নিয়ে একাধিক দাবি উঠেছিল।
একদল ইতিহাসবিদ বলেছিলেন, কঙ্কালগুলি দেশভাগের সময় দাঙ্গায় নিহতদের। যদিও আরেক দল ঐতিহাসিক দাবি করেন, ওই কঙ্কালগুলি সিপাহী বিদ্রোহে শহিদ ভারতীয় সেনাদের। যাঁদের ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ বাহিনী হত্যা করেছিল। সেই দাবিই এদিন সত্যে প্রমাণিত হল। ডিএনএ বিশ্লেষণ করে সে কথাই জানানো হয়েছে সদ্য প্রকাশিত গবেষণাপত্রে।
জানা গিয়েছে, গবেষণায় নর কঙ্কালগুলির মাথার খুলি, হাড় এবং দাঁতের ডিএনএ পরীক্ষা হয়। ডিএনএ বিশ্লেষণের জন্য ৫০ টি নমুনা এবং আইসোটোপ বিশ্লেষণের জন্য ৮৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর পরেই বোঝা যায় মৃতেরা ছিলেন ২৬ নং বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের সেনা। সিসিএমবি-র গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, কঙ্কালগুলি পঞ্জাবে পাওয়া গেলেও মৃতেরা পঞ্জাব বা পাকিস্তানের অধিবাসী ছিলেন না।
সিসিএমবি-র শীর্ষ বিজ্ঞানী ড. কে থঙ্গরাজ বলেন, “ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে পুরনো সময়ের মানুষের বিষয়ে জানা সম্ভব। আইসোটোপ বিশ্লেষণ খাদ্যাভ্যাসের উপর আলোকপাত করা যায়। যা বলে দেয় তাঁরা কোথাকার মানুষ। গবেষণায় বোঝা গিয়েছে, অজনালার কুয়ো থেকে যে মানব কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে, তাঁরা পঞ্জাব বা পাকিস্তানে অধিবাসী ছিলেন না। বরং উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে তাঁদের ডিএনএ সিকোয়েন্স মিলেছে।” তবে তাঁরা সেই সময় পাকিস্তানের মিয়ান-মিরের সেনা ছাউনিতে কর্মরত ছিলেন।