চলচ্চিত্র উৎসবের শেষবেলায় তাল কাটল ঝড়-বৃষ্টি, ভেঙে পড়ল হোডিং
ঠিক যেন পরম্পরার হস্তান্তর। বাবা পরিচালক। সিনেমায় ছেলের হাতেখড়িও তাঁরই হাতে। বাবা গৌতম ঘোষ। ছেলে ঈশান ঘোষ। শনিবার পিতা-পুত্রের এই যুগলবন্দির সাক্ষী থাকল ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। কাকতলীয় ভাবে এদিন গৌতম ও ঈশানের ছবির সাংবাদিক সম্মেলন ছিল পরপর। কিন্তু সেই আলোচনা হল একই মঞ্চে। বাবা-ছেলের এহেন সহাবস্থানের আর কোনও নজির এদিন মনে করতে পারলেন না সিনেপ্রেমীরা। ঈশান পরিচালিত প্রথম ছবি ‘ঝিল্লি’ এদিন উৎসবে দেখানো হয়। শহরের ধাপা অঞ্চলে শ্যুট করা এই ছবিতে উঠে এসেছে প্রান্তিক মানুষদের জীবনকথা। অন্যদিকে লকডাউনের প্রেক্ষাপটে তৈরি গৌতমের শর্ট ফিল্ম ‘সময়ের স্মৃতিমালা’ ইতিমধ্যেই উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। ছবি তৈরিতে শুরু থেকে বাবাকে কাছে পেলেও ঈশান বললেন, ‘বাবা শুরু থেকে বলেই দিয়েছিলেন যে, তোমাকেই পুরো কাজটা করতে হবে’। এই প্রসঙ্গে গৌতমের স্বীকারোক্তি,’ আমি একদিনও ওর শ্যুটিং ফ্লোরে যাইনি। ভবিষ্যতে ওর পরিচালিত কোনও ছবিতে ক্যামেরার দায়িত্ব পেলে খুবই খুশি হব।’
শনিবার সকালে নন্দন চত্বরে দাঁড়িয়ে একটা প্রশ্নই মাথায় ঘুরছিল, গেটা শহর কি আজ, রবিবার চলচ্চিত্র উৎসবমুখী হবে? আজ আবার মে দিবস। তার উপর গরম কমেছে। শনিবার নন্দনে বেলা যত গড়িয়েছে, ভিড় তত বেড়েছে। ডেইলি পাসের লম্বা লাইন, একতারা মঞ্চে আগতদের আড্ডা শীতের মরসুমে আয়োজিত ফেস্টিভ্যালের কথাই মনে করাচ্ছিল। মধুজা মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ডিপ সিক্স’, রাজ চক্রবর্তীর ‘ধর্মযুদ্ধ’, সুমন ঘোষের ‘ সার্চিং ফর হ্যাপিনেস’ দেখতে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। ইন্দিরা ধর মুখোপাধ্যায়ের ‘দ্য গ্রিন উইন্ডো’ বা সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘হোম’ এর মত স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিও ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।
তবে এদিন উৎসবের তাল কাটল দুটো ঘটনা। সন্ধ্যায় হঠাৎই শুরু হয় ব্যাপক ঝড় বৃষ্টি। আগাম প্রস্তুতি না থাকায় দর্শকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মানুষ নন্দনের মূল ভবনে আশ্রয় নেন। ঝড়ের দাপটে ভেঙে যায় উৎসবের বেশ কিছু হোর্ডিং। বিপদ এড়াতে কিছুক্ষণের জন্য নন্দন চত্বরের বাইরের সাজসজ্জায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে রয়েছে ডেইলি বুলেটিনের একটি মুদ্রণ প্রমাদ। লেখা হয়েছিল এদিন উৎসবে দেখানো হবে বাংলাদেশের ছবি ‘রেহানা মরিয়ম নুর’। কিন্তু ছবিটি আদতে এবারের উৎসবে দেখানোর কথা ছিল না। উল্লেখ্য গত বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই এই ত্রুটির জন্য সিনেপ্রেমীদের একাংশের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এক উৎসব কর্তা বললেন, ‘ ছবিটা আগে দেখানোর কথা ছিল। পরে বাদ পড়ে। এই ভুল অনিচ্ছাকৃত।’
বিকালে সেমিনারের বিষয়টিও ছিল আকর্ষণীয়। ‘সত্যজিতের কাছে ফিরতে হয় কেন?’ শীর্ষক বিষয়ে বললেন বিক্রম ঘোষ, গার্গী রায়চৌধুরী, দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ও শুভ্রজিৎ দত্ত। বক্তারা স্বীকার করে নেন যে, মানিকবাবুর ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হলে তার মধ্যে কোনও দোষ নেই। অন্যদিকে সন্ধ্যার সিনে আড্ডায় ছিল চাঁদের হাট। ‘সিনেমার জন্য গান, না গানের জন্য সিনেমা’ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন অনুপম রায়, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, জোজো ও মনোময় ভট্টাচার্য। সঞ্চালনায় জয় সরকার। আজ রবিবার উৎসবের শেষ দিন। সন্ধ্যায় রবীন্দ্রসদনে সমাপ্তি অনুষ্ঠান।