বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রে ‘বিপ্লব’, ফিরে দেখা তাঁর সাত বিখ্যাত উক্তি
চার বছর দু’মাস পাঁচ দিন। ঠিক এই সময়ের মাথাতেই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন ত্রিপুরার বিপ্লব দেব (Biplab Deb)। জিম ট্রেনার থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন ত্রিপুরার উদয়পুরের ভূমিপুত্র। জীবনের অধিকাংশ সময়টা দিল্লিতে কাটানো বিপ্লব যে আগরতলার মহাকরণে বসবেন তা বোধহয় নিজেও ভাবেননি। ২০১৮ সালের ভোটে মানিক সরকারের গদি উল্টে দিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন তিনি। একটা করে মন্তব্য করতেন, বিতর্ক তৈরি হত, তারপর তিনি দমে যেতেন না। আবার একটা এমন কথা বলতেন যা আগের বিতর্কের মাত্রাকে ছাপিয়ে যেত।
শনিবারের বারবেলায় ত্রিপুরার রাজভবনে গিয়ে ইস্তফা দিয়েছেন বিপ্লব (Biplab Deb)। এখন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক গত চার বছর দু’মাসে বিপ্লবের কী কী মন্তব্য বিতর্ক তৈরি করেছিল—
রবীন্দ্রনাথের নোবেল ফেরানো
বিপ্লব মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ৯ মার্চ, ২০১৮। ঠিক তার দু’মাসের মাথায় রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তিনি বলে বসেন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়। তিনিও পরে হয়তো বুঝেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ নোবেল নয়, নাইট উপাধি ফিরিয়েছিলেন। কিন্তু ভুল স্বীকার দূরের কথা জুন মাসের ভরা বর্ষায় ফের আর এক কাণ্ড ঘটান বিপ্লব।
মহাভারতের সময়ে ইন্টারনেট ছিল
নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, দেবতা গণেশ হচ্ছেন প্রথম প্লাস্টিক সার্জারির উদাহরণ। মানুষের দেহে হাতির মাথা, প্লাস্টিক সার্জারি ছাড়া সম্ভব হয়? সেই মোদীর আশীর্বাদধন্য বিপ্লব বলেছিলেন, মহাভারতের সময়ে ইন্টারনেটের প্রচলন ছিল। এ ব্যাপারে যুক্তিও দিয়েছিলেন বিপ্লব। তিনি বলেছিলেন, যদি ইন্টারনেট না-ই থাকত তাহলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে বসে সঞ্জয় সব খবর পাচ্ছিলেন কী করে? কী করেই বা পরবর্তী কৌশল বলে দিচ্ছিলেন? সবাই হেসেছিল। কিন্তু বিপ্লব ছিলেন সিরিয়াস। নিজের অবস্থানে অনড়।
হাঁস জলে সাঁতার কাটতে কাটতে অক্সিজেন ছাড়ে
ত্রিপুরা সরকারের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিপ্লব বলেছিলেন, হাঁস জলে সাঁতার কাটলে অক্সিজেন ছাড়ে। তাই গ্রামীণ ত্রিপুরার জনগণকে বিপ্লবের পরামর্শ ছিল, “আপনারা হাঁস পুষুন। তাহলে ডিমও পাবেন, তা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আবার পরিবেশে অক্সিজেনের মাত্রাও বাড়বে।”
ডায়না হেডেন ততটা সুন্দরী নন
এমনিতে বিপ্লব দেব ফ্যাশন কনসাস। সপ্তাহে সাত দিন সাত রঙের পাঞ্জাবি পরেন। গলায় সেই রঙের ম্যাচিং করে রিসা নেন। তিনি এতটাই তাঁর ফ্যাশনের প্রতি খুঁতখুতে যে, তাঁকে একবার এক চিত্র সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘স্যার রবীন্দ্রভবনে স্পট লাইটে আপনাকে কালো পাঞ্জাবিতে দারুণ লাগে। দারুণ ছবি ওঠে।” সেটা শোনার পর থেকে আগরতলা রবীন্দ্রভবনে অনুষ্ঠানে গেলে কালো পাঞ্জাবিই পরতেন বিপ্লব। সেই তিনি একবার বলেছিলেন, ডায়না হেডেনকে যতটা সুন্দরী বলা হয় তিনি কিন্তু ততটা সুন্দরী নন। এখন সুন্দর ব্যাপারটা আপেক্ষিক। সেটা এক-একজনের কাছে এক-এক রকম। কিন্তু একজন মুখ্যমন্ত্রীর কি এসব কথা বলা শোভা পায়? শত বিতর্কেও বিপ্লবকে টলানো যায়নি।
সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় বসতে পারবেন
এ যেন জায়গার নাম মিলিয়ে বলে দেওয়া উলুবেড়িয়ার পাশেই সাইবেরিয়া। বিপ্লব দেব খানিকটা তেমনই করেছিলেন ২০২০ সালে। একটি সরকারি অনুষ্ঠানেই তিনি বলেছিলেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় বসতে পারবেন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা নন।
মোদীর এক ভাই মুদি আর এক ভাই অটো চালক
নরেন্দ্র মোদী এককালে চা বিক্রি করতেন তা সবাই জানেন। ‘চা ওয়ালা’কে প্রচারে পুঁজিও করেছিল বিজেপি। কিন্তু তাঁর দু’ভাইয়ের একজন যে অটো চালান আর এক জন যে মুদিখানার দোকান চালান কেউ জানতেন? জানিয়েছিলেন বিপ্লব দেব। বলেছিলেন, “মোদীজির বৃদ্ধা মা রয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকেন না। ১০ ফুট বাই ১২ ফুট একটি ঘরে থাকেন। এখনও তাঁর এক ভাই মুদির দোকান চালান। আর এক ভাই অটো চালক। সারা দুনিয়ায় আর এমন একজনও প্রধানমন্ত্রী আছেন?” পরে জানা যায়, মোদীর দুই ভাই এমন কোনও পেশায় যুক্ত নন।
বিজেপি দখল করবে শ্রীলঙ্কা-নেপাল
২০২১ সালের গোড়ায় আগরতলা রবীন্দ্রভবনে গেরুয়া শিবিরের সোশ্যাল মিডিয়া সৈনিকদের সভায় বিপ্লব বলেছিলেন, কমিউনিস্টরা যদি সব দেশে থাকতে পারে তাহলে বিজেপি নয় কেন? এবার বিজেপি দখল করবে নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা। ওই বক্তব্যের পর কাটমাণ্ডুর তরফে কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছিল বিদেশমন্ত্রকে।