রাজ্যের সব হাসপাতাকে প্রসূতিদের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করার নির্দেশ স্বাস্থ্য দপ্তরের
উদ্দেশ্য থ্যালাসেমিয়া মুক্ত বাংলা। তাই রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের প্রত্যেক প্রসূতির থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা হবে। গর্ভাবস্থার প্রথম ১৬ সপ্তাহের মধ্যেই এই পরীক্ষা করানো হবে। এমনই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। পাশাপাশি রাজ্যের প্রত্যেক প্রাইভেট হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকে প্রত্যেক প্রসূতির থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করাতে বলবে সরকার। বাংলায় প্রতি বছর ১৫ লক্ষ প্রসব হয়।
শুধু তাই নয়, প্রাইভেট হাসপাতালের কোনও প্রসূতি যদি সরকারিক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করাতে চায় তাহলে সেই সুযোগও দেবে সরকার। সেক্ষেত্রে রাজ্য ৩৬টি থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটকে ব্যবহার করতে পারবেন প্রসৃতিরা। নিকটস্থ ইউনিট থেকে নিরখচায় এই পরীক্ষা করানো যাবে। প্রসঙ্গত, প্রাইভেটে এই পরীক্ষা করাতে কমবেশি ৫০০ টাকা খরচ পড়ে।
শুক্রবার রাজ্যের দুই স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ সিদ্ধার্থ নিয়োগী ও ডাঃ দেবাশিস ভট্টাচার্য এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, ‘সরকারিক্ষেত্রের সব প্রসূতির বাধ্যতামূলকভাবে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে একই অনুরোধ করা হবে।’
এই পরিকল্পনারই অঙ্গ হিসেবে ৩ দিন ধরে স্বাস্থ্যভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে কোরিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিং (সিভিএস) কর্মশালা। এই সিভিএস পদ্ধতির মাধ্যমেই গর্ভস্থ ভ্রূণের শরীর থেকে কোষ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শেখানো হল চিকিৎসকদের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার জন্য।
বর্তমানে ভারতে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হয়। ১০ কোটি জনসংখ্যার বাংলায় ১০-১৫ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। বর্তমানে রাজ্যে রক্তের এই অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজারের কাছাকাছি। ১৮ হাজার আক্রান্তকে রক্ত পাল্টাতে হয় নিয়মিত। ২৬ হাজারের সেই প্রয়োজন পড়ে না। তবে চিকিৎসার মধ্যে থাকাটা তাদের অত্যন্ত জরুরি। না হলে তিরিশের কোটাও পার করেন না রোগী।
প্রত্যেক প্রসূতির থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা জরুরি কেন? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এইচপিএলসি বা থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষায় যদি কোনও প্রসূতির এই রোগ ধরা পড়ে (বাহক হন), চটজলদি তাঁর স্বামীরও এই পরীক্ষা করাতে হবে। দু’জনেই বাহক বা কেরিয়ার হলে, গর্ভস্থ ভ্রূণের পরীক্ষা মাস্ট। কারণ, এক্ষেত্রে তার থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরীক্ষায় সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হলে সেক্ষেত্রে দম্পতির কাউন্সেলিং করিয়ে গর্ভপাত করতে অনুরোধ করা হবে।
বাংলার থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির নোডাল অফিসার এন আর এস মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি’র প্রধান ডাঃ তুফানকান্তি দলুাই বলেন, যাঁর বাড়িতে থ্যালাসেমিয়া রোগী আছে, তিনিই বোঝেন সন্তান প্রতিপালনের সঙ্গে কতটা কষ্ট, যন্ত্রণা ও প্রতি মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ জড়িয়ে। ভবিষ্যতে রাজ্যে যাতে নতুন করে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কেউ না জন্মায়, সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।