বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

‘বাঁকা কথা বলা লোকেরাই পুরস্কার পাওয়ার পর আপন ঘরের মেয়ে বলছে’ অভিমানী ডগর মণি

May 18, 2022 | 2 min read

একটা পুরস্কারই রাতারাতি পাল্টে দিয়েছে ডগরমণির জীবন। আগে প্রতিবেশীরা তাঁকে দেখলে মুখ বেঁকাত। নানা খারাপ কথা বলত। গ্রামে খারাপ মেয়ের তকমা পড়ে গিয়েছিল তাঁর উপর। আজ সেই প্রতিবেশীরাই তাঁর সঙ্গ লাভে উৎসুক। গ্রামের গর্ব বলে ডগরমণিকে আপন করে নিতে কাড়কাড়ি পড়ে গিয়েছে। সবই হয়েছে ‘দাদা সাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ সেরা অভিনেত্রী সম্মান লাভের পর। পল্লব রায় পরিচালিত সাঁওতালি সিনেমা ‘আশা’-তে এক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ডগরমণি টুডু। ছবিটির প্রযোজক কৃষ্ণ কল্যাণী।

ডগরের বাবা সাওঁতালি ভাষায় নাটক লিখতেন, গান বাঁধতেন। তাঁর মা, কাকু, জেঠু সবাই অভিনয় করতেন মঞ্চে। ফলে ছোট থেকেই অভিনয় রক্তে। স্কুলের বন্ধুরা জোর করে নাটকে নাম দিয়েছিল। সেই শুরু। একবার বাড়িতে না জানিয়ে থিয়েটার করতে স্কুল থেকে কলকাতা পাড়ি দিয়েছিলেন। ফিরে এসে মায়ের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েও বকাঝকা কম খেতে হয়নি।


পুরুলিয়ার জেলার বাঁকুড়া ঘেঁষা একপ্রান্তে প্রত্যন্ত গোপালপুরে বাড়ি ডগরের। ভালো নাম ডগরমণি টুডু হলেও বর্তমানে ডগর টুডু নামেই পরিচিতি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই ডগরমণির বাবা দুর্ঘটনায় মারা যান। দুই মেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন মা ঝর্না টুডু। তারপর প্রখ্যাত শিল্পী কল্পনা হাঁসদার সঙ্গে একাধিক স্টেজ পারফরমেন্স করে হাজার টাকা জুটতো। সেই টাকা থেকেই পড়ার খরচ চালিয়ে মার হাতেও কিছু দিতেন। পড়াশুনার পাশাপশি থিয়েটার, গান, গানের অ্যালবাম, সিনেমাতে অভিনয় সবই চালিয়ে গিয়েছে। যেটুকু টাকা রোজগার হতো তাই দিয়েই সংসারের খরচ চলতো।

সাঁওতালি ভাষায় স্নাতক এবং এমএ করার করার পর বর্তমানে রায়বাঁধ থেকে বিএড করছেন। রানিবাঁধ গালর্স আশ্রম বিদ্যালয়ে পড়ার সময় স্কুল থেকেই তেল, সাবান, কম্বল, জামাকাপড় দিত। ফলে সেসময় খরচ কম হতো। কলেজে পড়ার সময় যোগাযোগ হয় প্রবীর মহাপাত্রের সঙ্গে। তিনি নিজের দাদার মতো ডগরকে পথ দেখিয়েছেন। ডগর জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যে ৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অনেক গানের অ্যালবামও করেছেন। তবে গ্রামে অনেকেরই মোবাইল না থাকায় সিনেমা ও গানগুলি দেখতে পান না। তাঁর কাছের অনেকেই শুধুমাত্র ট্রেলারটুকু দেখতে পেয়েছেন। তাছাড়াও সাঁওতালি ভাষায় সিনেমার ব্যাপক প্রচারের প্লাটফর্মও কম। তবে রায়গঞ্জে একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টেছে। ডগর জানান, আশা সিনেমাতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মেয়ের অভিনয় করতে অনেকে বারণ করেছিল। বলেছিল গ্ল্যামার নষ্ট হবে। কিন্তু নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়াই যাঁর নেশা তাঁকে ঠেকাবে কে! সাফল্যও এসেছে। তবে দিল্লিতে পুরস্কার পাবেন, ভাবেননি। নাম ঘোষণার সময়েও বিশ্বাস হচ্ছিল না। ডগর বলেন, তবে ওই পুরস্কারেরও চেয়েও বড় পুরস্কার পেয়েছি। যাঁরা আমায় নিয়ে মাকে বাঁকা কথা শোনাতো, তাঁরাই দেখছি এখন নিজেদের আপন ঘরের মেয়ে বলে আমার পরিচয় দিচ্ছেন। আশেপাশের মানুষগুলোর এই পাল্টে যাওয়াটাই বড় পুরস্কার।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#award, #Dogormoni Tudu, #Regional cinema, #Purulia

আরো দেখুন