পর্তুগিজদের ঐতিহ্যের ব্যান্ডেল চিজ উৎপাদন শিল্পের পুনরুজ্জীবনে উদ্যোগী রাজ্য
ব্যান্ডেল বলতেই মনে পড়ে ব্যান্ডেল চার্চ, ব্যান্ডেল চিজ আর পর্তুগিজদের কথা। পাঁচ শতাব্দীর ঐতিহ্যের ব্যান্ডেল চিজেকে বিলুপ্তির পথ থেকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার।
বঙ্গ জীবনের অঙ্গ আলু থেকে রসগোল্লার জন্য উপযুক্ত মিহি আঁট ছানা, সবই পর্তুগিজ সাহেবদের দান। গঙ্গার ওপার হুগলি ছিল তাদের বিচরণক্ষেত্র। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কৃপায় ষোড়শ শতকের মধ্যভাগে নদীর ধারে চুঁচুড়ার কাছেই এক জনপদে পর্তুগিজরা গড়ে তুলেছিল নিজেদের বসতি। পেশায় বনিক তাই গড়ে উঠল নদী বন্দর। ধর্মাচরণের জন্য তৈরি হল গির্জা। বেশ জাঁকিয়েই বসল লাল মুখোরা।
একদা ঝড়ের কবলে পড়লেন এক পর্তুগিজ নাবিক। ঝড়-জলের সেই রাত মাতা মেরির নাম জপতে জপতে কোনক্রমে প্রাণ বাঁচল তার। মানত করেছিলেন, এ যাত্রায় প্রাণে বাঁচলে জাহাজের মাস্তুলটি গির্জা প্রাঙ্গণে স্থাপন করে যাবে। সেই মাস্তুলটি আজও দাঁড়িয়ে আছে। পর্তুগিজ ভাষায় মাস্তুলকে বলা হয় ব্যান্ডেল, অর্থাৎ এটিই আজকের ঐতিহাসিক জনপদ ব্যান্ডেল। ব্যান্ডেলের অন্যতম আকর্ষণ হল চার্চ, পর্যটকদের ব্যান্ডেল ব্যাসিলিকাও কিন্তু পর্তুগিজদের দান।
পর্তুগিজরা জিভের কথাও চিন্তা করেছিল। রসনাতৃপ্তি করতে জন্ম দিয়েছিল ব্যান্ডেল চিজ-এর। একদা গোটা এশিয়া মহাদেশজুড়েই ব্যান্ডেল চিজের খ্যাতি ছিল। যদিও এখন তা বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে হুগলি ও বাঁকুড়া জেলার হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি পরিবারই কেবল ব্যান্ডেল চিজ তৈরির পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাদের তৈরি চিজ নিউ মার্কেটের কয়েকটি দোকানে পাওয়া যায়। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে আজও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা ও জনপ্রিয়তার কথা জানতে পেরেই চিজ তৈরির শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।
৫০০ বছরের সেই ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে তৎপর বাংলার সরকার। রাজ্য বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী খুঁজে পেয়েছে, যাঁরা ব্যান্ডেল চিজের পুনরুজ্জীবনে সাহায্য করবেন। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠকও হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, আগামী ১০ জুন ক্ষুদ্র-কুটির ও মাঝারি শিল্প দপ্তর আয়োজিত হুগলি জেলার ‘সিনার্জি’তে ব্যান্ডেল চিজের পুনরুজ্জীবনের রূপরেখা তৈরি করা হবে। বিনিয়োগকারীরাও সেখানে থাকবেন।
জানা যাচ্ছে, এই বিশেষ চিজের সঙ্গে ব্যান্ডেলের নাম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, তাই ব্যান্ডেলেও একটি উৎপাদন ইউনিট রাখতে পারে রাজ্য। চিজ শিল্পকে বড় পরিসরে আনতে, সিঙ্গুর থেকে কিছু দূরেই হুগলি জেলার পোলবারে নবনির্মিত একটি শিল্পতালুকে জমি দেখছে রাজ্য। চিজের সঙ্গে সঙ্গে অনুসারী অন্য শিল্পস্থাপনের বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।