পৃথিবী জুড়ে খাদ্যের অপচয় নিয়ে চিন্তিত ইউনাইটেড নেশনস
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৯ শতাংশ নিয়মিত খিদের সঙ্গে লড়াই করে। আর অন্যদিকে পৃথিবীর নানা দেশে যে পরিমাণ খাদ্য অপচয় হয় তা দিয়ে গোটা বিশ্বের খিদের সমস্যা অনেকটাই মেটানো যেত। পরিসংখ্যান বলছে, স্পেন প্রতি বছর প্রায় ১.৩৬ মিলিয়ন টন খাদ্য এবং পানীয় অপচয় করে যা জনপ্রতি প্রায় ৩১ কিলোগ্রামের সমান। মাথাপিছু যার আর্থিক মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২১ হাজার টাকা!
খাবার অপচয় যেমন নৈতিক দিক থেকে খারাপ, তেমন পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকারক। খাবারের বর্জ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস নির্গত হয় যা পৃথিবীর জলবায়ুকে গরম করে দেয়। এমন ক্ষতিকারক গ্যাসের অন্তত ১০ শতাংশ নির্গত হয় খাদ্যবর্জ্য থেকেই।
‘ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট’-এর ২০২১ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে সারা বিশ্বে ২০১৯ সালে বিক্রি হওয়া প্রায় ৯৩০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয়েছে। গোটা বিশ্বের দোকান, রেস্তরাঁগুলির বেঁচে যাওয়া খাবার ফেলে দেওয়া হয়। যার প্রভাব পড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে এবং পরিবেশে।
অপচয় হওয়া খাদ্য একজায়গায় নিয়ে তা প্রসেস করলে তা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাতে পরিবেশের লাভ। কেউ কেউ আছেন যাঁরা দায়িত্ব নিয়ে এই কাজ করেন। কিন্তু এমন মানুষের সংখ্যা নগণ্য। মিশরে চলতি সিওপি২৭ ক্লাইমেট সামিটে এই বিষয়টাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালে সমস্ত দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্যবর্জ্য অর্ধেকে নামিয়ে আনার শপথ নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ দেশই শপথ পালন করতে পারছে না, পিছিয়ে পড়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জ জানাচ্ছে, খাদ্য অপচয়ের সমস্যা শুধুমাত্র ধনী দেশগুলোতেই আছে এমন নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের গত বছরের সমীক্ষায় প্রকাশ, কোনও দেশের জিডিপি-র সঙ্গে সেখানকার মানুষের খাবার নষ্ট করার প্রায় কোনও সম্পর্কই নেই। আমেরিকার অবস্থা সবথেকে শোচনীয়। প্রতিদিন একজন আমেরিকান গড়ে ৭০০ ক্যালোরির খাবার অপচয় করে যা মানবদেহে প্রয়োজনীয় দৈনিক ক্যালোরির তিন ভাগের এক ভাগ!
রাষ্ট্রপুঞ্জের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের খাদ্য অপচয় ও বর্জ্য বিভাগের প্রধান রোসা রোল বলছেন, আর আট বছর বাকি আছে অথচ অভীষ্ট লক্ষ্যের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারিনি আমরা। খাদ্য অপচয়ে শীর্ষে থাকা পাঁচটি দেশের মধ্যে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে ২০১৫ থেকে খাদ্য অপচয় উল্টে বেড়ে গেছে।