খেলা বিভাগে ফিরে যান

আজ মরক্কো-ফ্রান্স ম্যাচটি অভিবাসী ফরাসি নাগরিকদের জন্য ‘আনুগত্যের পরীক্ষা’!

December 14, 2022 | 2 min read

কাতার বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই নতুন এক রূপকথা লিখে ফেলেছে মরক্কো। বেলজিয়াম, পর্তুগাল, স্পেনকে মাটিতে নামিয়ে প্রথম আফ্রকান দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে তারা। এবার তাদের সামনে ফ্রান্স। অ্যাটলাস লায়ন্সরা আজ রাতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ওপর থাবা বসিয়ে সাফল্যের গর্জন তুলতে পারবে কীনা তা জানার জন্য আর মাত্র কয়েকটি ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।

তবে মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্কও আলাদা করে প্রভাব ফেলবে আজকের ম্যাচে।

মরক্কো এক সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। কাছের দেশ হওয়ায় ফ্রান্সে মরক্কোন অভিবাসীও কম নয়। সেই কারণেই কিনা কাতারে মরক্কোর অবিশ্বাস্য সব জয়ে ফ্রান্সের রাজপথে তাদের মিছিল করতে দেখা গেছে। গত শনিবার, বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনলে জিতে সেমিফাইনালে ‍ওঠে মরক্কো এবং ফ্রান্স। পর্তুগালকে হারিয়ে মরক্কো প্রথমবারের জন্য সেমিফাইনালে পৌঁছেতে উল্লাসে ফেটে পড়েন সমর্থকেরা। সেই সময় ওই একই জায়গায় ফ্রান্সের সমর্থকেরা উপস্থিত ছিল। শুরু হয় অশান্তি। মরক্কো এবং ফ্রান্সের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ভাঙচুর ও হাতাহাতি চলে। দোকানপাটও ভাঙচুর করা হয়।

মরক্কো দলটি ঠাসা প্রবাসী সব খেলোয়াড়ে। আফ্রিকান দলটির ডাগআউটের নেতা ওয়ালিদ রেগরাগিও ফ্রান্স প্রবাসী। তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, ফুটবলের দুনিয়ায় প্রবেশ-সবকিছুই ফ্রান্সের মাটিতে। তাই বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ফ্রান্স ও মরক্কোর মুখোমুখি লড়াই হিচেম সায়াদির মতো অনেককে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ‘আনুগত্যের পরীক্ষার’ সামনে।

৪৭ বছর বয়সী রেগরাগিকে মরক্কো কোচ হিসেবে নিয়োগ করে গত অগাস্টে, বিশ্বকাপ শুরুর তিন মাসেরও কম সময় আগে। তার জন্ম ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ৩০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বের কোবেই-ইয়েসনে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। ফুটবলের হাতেখড়িও সেখানে।

আজাকসিও, দিজোঁ-সহ ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি ক্লাবে খেলেছেন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মরক্কো জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছেন ৪৫ ম্যাচ।

ফ্রান্স-মরক্কোর লড়াইয়ে ক্লাব সতীর্থ ও বন্ধুরাও মুখোমুখি হচ্ছে একে অন্যের। ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপে ও মরক্কোর ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি খেলেন পিএসজির হয়ে। ভালো বন্ধুও তারা। রেগরাগি ২০০৮ সালে গুহোনবলের হয়ে ফরাসি স্ট্রাইকার অলিভিয়ে জিরুদের সঙ্গে খেলেছেন।

ভৌগলিক দিক থেকে দেখলে মরক্কো টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিয়েছে তাদের সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তিকে। বিশ শতকে স্পেনের উপনিবেশ ছিল মরক্কো। এখনও দুটি ছিটমহল স্পেনের নিয়ন্ত্রণে আছে। মরক্কোর এবারের প্রতিপক্ষ যারা, সেই ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে তারা স্বাধীন হয় ১৯৫৬ সালে।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মুখোমুখি হওয়ার আগে রেগরাগি অবশ্য বললেন, খেলার বাইরে অন্য কিছু তিনি ভাবতে চান না। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মুখোমুখি হওয়ার আগে রেগরাগি অবশ্য বললেন, খেলার বাইরে অন্য কিছু তিনি ভাবতে চান না। “আমি দ্বৈত নাগরিক (ফ্রান্স ও মরক্কোর)। ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলতে পারাটা সম্মানের, একই সঙ্গে আনন্দেরও। কিন্তু এটা স্রেফ ফুটবল খেলা… আমি এখানে একজন ফুটবল কোচ হিসেবে এসেছি এবং আমার মূল লক্ষ্য জয়।

ফ্রান্সে এখন অতি-ডানপন্থীদের ক্ষমতা বেড়েছে। তুলুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য ও নাগরিক স্বাধীনতার আইনি গবেষক রিম সালাহ মনে করেন, মরক্কো-ফ্রান্স ম্যাচটি অভিবাসী ফরাসি নাগরিকদের জন্য ‘আনুগত্যের পরীক্ষা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে দুই দলের শক্তি বিবেচনায় নিলে ফ্রান্সকেই এগিয়ে রাখতে হবে। পার্থক্যটা এখানে ফ্রান্সের আক্রমণ বনাম মরক্কোর প্রতিরোধ। এখন পর্যন্ত পুরো টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষের একটিও গোল হজম করেনি মরক্কো। একটি গোল হজম করেছে শুধু আত্মঘাতী থেকে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Morocco, #France vs Morocco, #france, #FIFA World Cup 2022

আরো দেখুন