পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আশা দেখছে না বিজেপি, তাই লক্ষ্য শুধু লোকসভা
নতুন বছরের শুরুতেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election)। কিন্তু রাজ্যের গ্রামাঞ্চলের এই নির্বাচনের আগে কার্যত দিশেহারা গেরুয়া শিবির। অধিকাংশ বুথে কমিটি তৈরি হয়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে হাতে যেটুকু সময় আছে তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি বুথে সক্রিয় কমিটি তৈরি করা যে কার্যত অসম্ভব এমনটাই জেলাস্তর থেকে রিপোর্ট গিয়েছে রাজ্যের কাছে। যা বঙ্গ বিজেপির চিন্তার মেঘ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত শুক্রবার বিজেপির রাজ্যদপ্তরে কোর কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। ওই বৈঠকে শাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর কাছে যে রিপোর্ট রয়েছে তাতে দলের রাজ্য নেতা থেকে সাংসদ, বিধায়করা নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখছেন না।
গত সপ্তাহে হুগলিতে রাজ্য বিজেপির বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠকে পুরনো নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কিনা বি এল সন্তোষের (BL Santhosh) এই প্রশ্নে কার্যত অস্বস্তিতে পড়ে যান জেলা ইনচার্জরা। আবার বৈঠকে সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, জেলা ইনচার্জরা নিচুতলায় ঠিকমতো ‘প্রবাস’ করছেন না।
তাই এবার স্থানীয় নেতৃত্বকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু করতে চলেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধনদ (Satish Dhond) দলীয় বৈঠকে নতুন ফর্মুলা দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। সতীশ বলেছেন, প্রতি বুথে ৩০ জন কার্যকর্তা তুলে আনতে হবে। একজনকে দু’টি বুথের দায়িত্ব দিতে হবে।
পুরনো নেতা—কর্মীদের খোঁজ শুরু হয়েছে। আগে যাঁরা সভাপতি ছিলেন, তাঁদের অধীনে যে কমিটি ছিল। কিন্তু সেই তালিকা পেতেও হিমশিম অবস্থা। অনেকের সঙ্গেই দলের যোগাযোগ নেই। কেউ আবার গেরুয়া শিবির ত্যাগ করে নাম লিখিয়েছেন শাসকদলে।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে আপাতত দিল্লিতে রয়েছে বঙ্গ বিজেপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব। সোমবার রাতে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারের বাসভবনে বাংলার সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানেই বঙ্গ নেতাদের বিরুদ্ধে সাংসদরা ক্ষোভ উগড়ে দেন বলে সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar), শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) কার্যত তুলোধনা করলেন দলেরই সাংসদরা।
অন্যদিকে মঙ্গলবার দিল্লি সফরের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সংসদের সেন্ট্রাল হলে দেখা হয় শুভেন্দু অধিকারীর। মিনিট তিনেক কথা হয় তাঁদের মধ্যে। মনে করা হচ্ছে, রাজ্য়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানিয়ে থাকতে পারেন বিরোধী দলনেতা। আবার রাজ্যের খোঁজখবর নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রীও।
তবে যাই হোক গোষ্ঠী কোন্দলে বঙ্গ বিজেপি (BJP Bengal) যে জেরবার তা পরিস্কার। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘনঘন বৈঠক করছেন দ্রুত দলের ‘রোগ’ সারানোর জন্য। তাঁরা বুঝতে পারছেন আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই ‘রোগ’ থেকে দলকে বের করা সম্ভব হবে নয়। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়, আপাতত লক্ষ্য আগামী লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের জেতা আসনগুলোকে যেনতন প্রকারে রক্ষা করা। এই কাজটা যে খুব একটা সহজ হবে না, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন জেপি নাড্ডা (JP Nadda), অমিত শাহরা। তাই তাঁরা বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে একসঙ্গে দিল্লিতে ডেকে নতুন ওষুধ প্রেসক্রাইব করে দিচ্ছেন।