লাদাখ নিয়ে বেকায়দায় মোদী সরকার-এবার সোনম ওয়াংচুকের আন্দোলনকে থামানোর চেষ্টা?
দীর্ঘদিন ধরেই লাদাখের মানুষের অধিকারের দাবিতে সরব প্রযুক্তিবিদ-উদ্ভাবক, সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুক। গত ২৬ জানুয়ারি থেকে পাঁচ দিনের অনশন কর্মসূচি নিয়েছিলেন তিনি। মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্রবল শীতের মধ্যে শুরু করেছিলেন অনশন। লাদাখের সাধারণ মানুষ সমস্যায় জর্জরিত, প্রাকৃতিকভাবেও লাদাখের অবস্থা ভাল নয়। যেকোনও সময় যোশীমঠের মতো দশা হতে পারে। মোদী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, লাদাখের মানুষের সমস্যার সমাধান এবং বাস্তুতন্ত্রের ভরসাম্য রক্ষা করতেই অনশনে বসেছিলেন তিনি। কিন্তু গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন সোনম। ওই ফেসবুক পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, তাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। ভিডিওয় তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, তাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। গৃহবন্দির চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি। প্রসঙ্গত, প্রথমে অনশনের জন্যে ১৮ হাজার ফুট উচ্চতার খারদুংলা পাসকে বেছেছিলেন ওয়াংচুক।
যদিও পরে তিনি জানান, প্রবল তুষারপাতের কারণে খারদুংলার রাস্তা অবরুদ্ধ হওয়ায় তিনি হিয়াল থেকে অনশন করছেন। এরপরেই জানা যায় তিনি গৃহবন্দি। প্রশাসন তাঁকে বাইরে বেরতে দিচ্ছে না।
পূর্ণ রাজ্য হিসেবে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার, দীর্ঘদিন ধরেই লাদাখের মানুষদের দাবি। রাজ্যের স্বীকৃতি না হলেও, নিদেন পক্ষে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল অনুযায়ী স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবিতে সরব লাদাখের মানুষ। আগেই এই দাবির কথা তুলে ধরেছেন সোনম। কদিন আগেই মোদীর কাছে সোনম আবেদন করেছিলেন, লাদাখে অত্যধিকমাত্রায় শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে। কয়েকদিনের মধ্যে গোটা লাদাখ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই লাদাখসহ হিমালয়ের অন্যান্য অঞ্চলকে রক্ষা করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত মোদী সরকারের। সে সময় ভিডিওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছিলেন সোনম। সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল অনুযায়ী লাদাখের প্রকৃতিকে বাঁচানোর দাবিও জানিয়েছিলেন। দীর্ঘ ১৮ মিনিটের ভিডিওয় তিনি লাদাখের মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। লাদাখে কর্মসংস্থান নেই। ১২ হাজার চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও চাকরি পেয়েছেন ৮০০ জন। তাও পুলিশে। চারদিকে প্রতিবাদ হচ্ছে। লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে সোনমের দাবি, লাদাখের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও প্রশাসনের গা ছাড়া মনোভাবের কারণে সেই টাকার মানুষের কাজে লাগছে না।
এবার তিনি অভিযোগ করলেন, প্রশাসন তাকে গৃহবন্দি করেছে। সেই সঙ্গে তিনি জানা, প্রশাসন তাকে একটি বন্ডে স্বাক্ষর করার জন্যে জোর দিচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, লাদাখের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কোনও বিবৃতি দেবেন না, কোথাও মন্তব্য করবেন না। এই সংক্রান্ত বিষয়ে জনসমক্ষেও তাকে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। আদপে লাদাখ বাঁচাও আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে দাগিয়ে দিতে চাইছে মোদী সরকার। প্রশাসনের দেওয়া চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ওয়াংচুকের আন্দোলনে নাকি লাদাখের শান্তি বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে এক গুচ্ছ শর্ত চাপানো হয়েছে। নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে তা জানিয়েছেন ওয়াংচুক। প্রশাসনের তরফে দুদিন ধরে তাকে স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি সাফ জানিয়েছেন তিনি স্বাক্ষর করবেন না। তার মতে, মোদী সরকারের উচিত লাদাখের মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।